এবার শিরোনামহীনের ড্রামার কাজী শাফিন আহমেদ বললেন ভোকাল তানযীর তুহিনের ব্যান্ড ছাড়ার বিষয়ে এবং ব্যান্ডের অনেক অজানা তথ্য প্রকাশ করলেন,যে কথা গুলো ব্যান্ডের বাহিরের কেউ জানে না ,কথা গুলো জানতে অবশ্যই পড়ুন
এবার শিরোনামহীনের ড্রামার কাজী শাফিন আহমেদ বললেন ভোকাল তানযীর তুহিনের ব্যান্ড ছেড়ে চলে যাবার ব্যাপারে এবং শিরোনামহীনের ভিতরের অনেক অজানা তথ্য প্রকাশ করলেন,যে কথা গুলো ব্যান্ডের বাহিরের কেউ জানে না
ড্রামার কাজী শাফিন আহমেদের পুরো বক্তব্য হুবুহু তুলে ধরা হলো
একটি ব্যান্ড, একজন ভোকাল এবং বাংলাদেশ।
বন্ধুরা, গত কয়েকদিন আমার ব্যান্ড শিরোনামহীন এর ভোকাল তানযীর তুহীন এর ব্যান্ড ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্তে আপনাদের মত আমিও বিস্মিত হয়েছি। সিদ্ধান্তের পেছনের কারণ পর্যালোচনা করে সবাই শিরোনামহীন এর বাকি সদস্যদের কে টাকা লোভী এবং মনুষত্যহীন বলে মনে করছেন। যার দায় স্বাভাবিক ভাবেই আমার উপরেও পড়ে। সামাজিক ভাবে আমাদেরকে যেভাবে হেয় করা হয়েছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং একজন মিউসিশিয়ান তার চেয়েও বড় কথা একজন মানুষ হিসেবে সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য কিছু কথা শেয়ার করাটা দায়িত্ব বলে মনে করছি। ব্যাক্তিগত ভাবে হাজারো মানুষ আমায় মাথায় নিয়ে নাচবে এমন খ্যাতির পেছনে কখনই ছুটিনি। ৫ জন মানুষ সম্মানের চোখে দেখবে এটুকুই চেয়েছিলাম।
লেখা টাকে শুধু আমাদের ব্যান্ড এর গল্প না ভেবে নতুন প্রজন্মের জন্য (যারা নতুন ব্যান্ড শুরু করেছে এবং যারা ব্যান্ড করতে আগ্রহী) একটা গাইডলাইন হিসেবেও দেখা যেতে পারে। তারা বুঝতে পারবে যে কতটুকু বড় মন নিয়ে ব্যান্ড করতে হয়।
প্রথমে নিজের পরিচয় টা দিয়ে নিই। দিতে বাধ্য হচ্ছি কারণ আমি ব্যান্ড এর ভোকাল না। পেছনে কাজ করি, ড্রামস সহ আরও কিছু ইন্সট্রুমেন্ট বাজাই, গান সৃষ্টি করি, কম্পোজ করি। শিরোনামহীন এ ২০০৩ এ জয়েন করি। শিরোনামহীন এর বেশ কিছু জনপ্রিয় গান যেমন বাংলাদেশ, চিঠি পৌঁছে যাবে, পদ্ম পাতার জল, শন শন যদিও কাশবন, পরী, ট্রেন, বুকে থাক বাংলাদেশ, যেতে যেতে একলা পথে (রবীন্দ্র সংগীত) আমার হাত ধরেই শিরোনামহীন এ এসেছে। যদিও তাতে অনেকেরই কিছু যায় আসে না, কারণ তারা গানের ভোকালকেই চেনে।
মিডিয়াতে তানযীর তুহীন এর ব্যান্ড ছাড়ার ব্যাপারটা যেভাবে এসেছে তাতে পৃথিবীর যে কোন মানুষেরই ব্যাপার টা কে অমানবিক এবং নিন্দনীয় মনে হবে। হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাদের জায়গায় আমি থাকলেও তাই মনে হত।
এবার আসি আসল কথায়। এটা কেন হয়েছে সেটা বোঝানোর জন্য ব্যান্ড এর ভেতরের সাথে অতীতের কিছু কথা এবং ঘটনা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে হবে। যেটা জীবনেও কখনও শেয়ার না করলেও চলতো।
তারও আগে বলে নিই শিরোনামহীন ব্যান্ড টাকে আসলে আমরা কিভাবে দেখি ?!! মানে আমরা ব্যান্ড মেম্বার রা কিভাবে দেখি … মানুষ যা দেখে সেটা না… মানুষকে আমরা যা দেখাব মানুষ তাই দেখবে।
শিরোনামহীনের প্রতিটা সদস্য বিশ্বাস করে শিরোনামহীনের প্রতিটা সদস্য সমান।(আমার কথায় যদি কোন সদস্যর আপত্তি থাকে তাহলে কমেন্ট এ এসে জানিয়ে দেয়ার অনুরোধ করছি) ব্যান্ড কখনও কাউকে আলাদাভাবে অতিরিক্ত সুযোগ সুবিধা দিবেনা। ব্যান্ড এর নিয়ম সবার জন্য সমান। ব্যান্ড তার প্রত্যেক সদস্যের কাছ থেকে সমান টাইম ও ডেডিকেশন এক্সপেক্ট করে এবং যেকোন জরুরী পরিস্থিতিতে ব্যান্ড কে সচল রাখার জন্য সব মেম্বারদের সহযোগিতা এক্সপেক্ট করে। ব্যান্ড এ যে যাই অবদান রাখুক সেটা ব্যান্ড এর সম্পত্তি বলে বিবেচিত হবে। উদাহরণ স্বরূপ ব্যান্ড এ কেউ কোন গান লিখলে সেটা হবে শিরোনামহীন এর গান, কোন ব্যাক্তির গান নয়। ব্যাক্তিসত্তা কখনই এখানে বড় নয়। এখানে যদি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও আমাদের সাথে কাজ করতেন এবং ওনার লেখা যদি থাকতো, তা হত শিরোনামহীনের গান, রবীন্দ্র সংগীত নয়। এমন উদাহরণ পৃথিবীতে এবং আমাদের দেশে অনেক আছে। যেমন মেটালিকা, আয়রন মেইডেন, ওয়ারফেজ এবং আর্টসেল এর গান। দলীয় সত্ত্বাই এখানে প্রধান।আরেকটা ব্যাপার হল, ব্যান্ড এর যেকোন মেম্বার ব্যান্ড এর বাইরে কাজ না করা অথবা বাইরে কাজ করার আগে ব্যান্ড এর অনুমতি নেয়া।
শিরোনামহীন যখন অনেক ছোট ছিল, সেই ২০০৪ এ, যখন আমরা নিজেরা পকেট থেকে টাকা দিয়ে এ্যালবাম করি, পোস্টার ছাপাই, মিউসিক ভিডিও করি, তখনও সবাই মিলে টাকা দিই। আমার মনে আছে আমি ৫০০০ টাকা দিয়েছিলাম কারণ আমি তখন কলেজে পড়ি… পোস্টার প্রিন্টিং এর চার্জ। এর কারণ সবার টাকা শেষ হয়ে গিয়েছিল। আমার কাছেও আর কোন টাকা ছিলনা। সবচেয়ে বেশী টাকা দিয়েছিলেন জিয়া ভাই… ৭৭০০০ টাকা। এখনো যদি কোন কাজে ইনভেস্ট করতে হয়, শিরোনামহীনের প্রতিটি সদস্য সমান ভাবে সেটা করে।
আমি ব্যাক্তিগত ভাবে বিশ্বাস করি উপরে যেসব নিয়ম বললাম এর যেকোন একটা ব্যাহত হলেই, তখন ব্যান্ড নানান অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে। যেমন ব্যান্ড যদি কাউকে কন্সার্টে গাড়িতে পাঠায় আর কাউকে প্লেন এ পাঠায়, তাতে ব্যান্ড এ কোন্দল শুরু হবে। সবাইকে সমান ভাবে দেখতে হবে।
এবার আমাদের ব্যান্ড এর পুরনো কিহু ইতিহাস বলবো যা আপনাদের অজানা। সাথে কিছু প্রশ্নও থাকবে।
১। আমাদের ব্যান্ড এর অনেক মেম্বাররাই অনেক অসুস্থ থেকেও লাইভ প্রোগ্রামে যেতে হয়েছে। আমি নিজে ১০৩ জ্বর নিয়ে বাসা থেকে সবার নিষেধ সত্ত্বেও বের হয়ে গিয়েছি। তুহীন ভাইও ইঞ্জেকশান নিয়েও শো করেছে। কেন? টাকার জন্য? যখন আমরা ২০০৩-০৪-০৫ এ কোন টাকাই পেতাম না, তখন কেন গিয়েছি? টাকা তো আর দিবেনা। দেখতে হবে, ডেডিকেশান টা কোন লেভেল এর। বুঝতে হবে কমিট্মেন্ট ব্রেক না করাটাকে আমরা কতটুকু প্রাধান্য দিই।
২। ২০১৫ তে ৬ই মার্চ জিয়া ভাইর মা মারা যান। প্রাণ প্রিয় মা কে সন্ধ্যায় কবরে শুইয়ে রেখে পরদিন জয়বাংলা কন্সার্টে উনি আসেন, সেটা কি টাকার জন্যে? অথবা উনি যদি নিজে কন্সার্ট কেন্সেল করে দিতে বলতেন, অথবা যদি উনি উনাকে ছাড়াই কন্সার্ট কন্টিনিউ করতে বলে ব্যান্ড ছেড়ে দিয়ে মিডিয়াতে সবাইকে গিয়ে বলতেন, ব্যান্ড টাকার জন্য কন্সার্ট করলো… আপনি কি বলতেন? কিছু হয়তো বলতেন ও না। কারণ উনিতো সামান্য বেইসিস্ট, সামান্য গীতিকার, কম্পোজার। আপনি ওনাকে চেনেন ও না
🙂 মিডিয়া ও ওনার কথা ছাপাতো কিনা সন্দেহ, কারণ উনি ব্যান্ড ছাড়লে সেটাও তো আর হট নিউজ না
🙂


৩। আমাদের কীবোর্ডইস্ট রাসেল এর আপন ভাইয়ের বিয়ে আর শিরোনামহীনেরও একটা কন্সার্ট ঠিক ঐদিনে। তুহীন ভাই সহ ব্যান্ড এর বাকিরা ডিসিশান নিয়েছিল কন্সার্ট করবে ওকে ছাড়াই। রাসেল ও সম্মতি জানিয়েছিল। রাসেল যদি মিডিয়াতে যেয়ে বিচার দিত, আপনারা কি বলতেন? কিছুই না ! সামান্য একজন কীবোর্ডইস্ট ও আপনাদের কাছে, বাট আমাদের কাছে ও ব্যান্ড মেম্বার ।
৪। রাসেল নিজের বাবা মা কে দেখতে ইটালি যাবে কয়েক সপ্তাহের জন্য। ব্যান্ড তো কন্সার্ট অফ করতে পারতো। ও নিজেই ব্যান্ড কে প্রপোজ করেছে একজন গেস্ট কীবোর্ডইস্ট কে নিয়ে আপনারা এই টাইম টুকু চালিয়ে নেন। তুহীন ভাই সহ ব্যান্ড এর বাকিরা সেটা গ্রহণ করেছে, যদিও পরে যাওয়াটা বাতিল হয়েছে।
৫। ২০০৮ সালে তুষার ভাই অনেক ব্যস্ত হয়ে গেলেন নিজের ব্যাক্তিগত কাজে। তুষার ভাই নিজেই ব্যান্ডকে প্রপোজাল দিলেন আরেকজন গিটারিস্ট কে গেস্ট হিসাবে নিই। তুষার ভাই অনুপস্থিত থাকলে ব্যান্ড যেন কন্সার্ট চালিয়ে যেতে পারে। তুহীন ভাই সহ পুরা ব্যান্ড সেটা গ্রহণ করেছে। গেস্ট গিটারিস্ট হিসাবে দিয়াত খান কে আমরা ইনভাইট করি। কোন কোন স্টেজ এ দুজনই বাজিয়েছে। পরবর্তীতে দিয়াত পারমানেন্ট গিটারিস্ট হয়েছে। তুষার ভাই তো কিছু বলেনি… কেন? সামান্য গিটারিস্ট, কম্পোজার বলে?
৬। ডিসেম্বর ২০১৩, তুহীন ভাই ব্যাক্তিগত কারণে ঢাকার বাইরে। বিটিভির “আমরাও পারি” অনুষ্ঠানের শুটিং। বুয়েটের একটা কন্সার্টের অফার আসলো, তুহীন ভাইকে জানানো হল। উনি বললেন, “কোন ভাবেই আসতে পারবো না।” ফ্যান রা পাগল প্রায়। আমরা তাদের বললাম তুহীন ভাই আনএভেইলেবল।ফ্যান রা কোন কথা শুনল না, “আসতেই হবে! আমরা নিজেরাই গান গাইব সবাই মিলে, তবু শিরোনামহীন কে আসতেই হবে।” এর মধ্যে নতুন কাউকে তৈরি করার সময় ও নেই। আমরা গেলাম, যত অল্পই হোক পারফর্ম করলাম। ওল্ড স্কুল ব্যান্ড এর মোবাসশের সহ আরও ১৫/২০ জন গাইলো। কোন টাকাও নেইনি।
৭। ২০১৬ এর ২৭ জুলাই। রাজশাহীতে রুয়েট এ প্রোগ্রাম। রাসেল ইতালি থাকবে। তুহীন ভাই সহ আমরা বাকিরা সিদ্ধান্ত নিই, ওকে ছাড়াই কন্সার্ট করবো কারণ আরেকজন গেস্ট কীবোর্ডইস্ট নিয়ে এর মধ্যে প্র্যাকটিস করে কোনভাবেই প্রস্তুত হতে পারবোনা। রাসেল সম্মতি দেয়, আমরা কন্সার্ট করি।
৯। ২০০৮ এর দিকে হবে, ঠিক মনে নেই, একটা কন্সার্ট এ যাব আমরা… তুষার ভাই কোনভাবেই আসতে পারলো না। আমরা ওনাকে ছাড়া শো করলাম।
১০। ২০০৫ এর পর আজ পর্যন্ত একটা ঈদ ও গ্রামের বাড়ীতে উদযাপন করতে পারিনি। ব্যান্ড এর কেউই পারেনি। বুঝতে হবে ডেডীকেশান টা কোন পর্যায়ে। শুধু টাকার জন্য? টিভি লাইভ করে কত টাকা পাওয়া যায় মিউসিশিয়ান রা সবাই জানেন
🙂

১১। আমরা কেউ ইচ্ছা করলে বিদেশে গিয়ে ছুটি কাটিয়ে আসতে পারিনা। আমাদের নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। দিয়াত একবার শো এর সিজন এ এয়ার টিকেট পর্যন্ত কেটে ফেলেছে। ব্যান্ড এর একটা শো আসলো। তুহীন ভাই সহ সবাই ওর টিকেট চ্যাঞ্জ করালো। টিকেটের জরিমানাও ওর গুনতে হল। একই ঘটনা তুহীন ভাইয়েরও আছে। ওনাকে ও একটা শো এর জন্য ফ্লাইট এর ডেট চ্যাঞ্জ করতে হয়েছিল।
আপনাদের বুঝতে হবে আপনারা কেন কখনই শিরোনামহীনকে লম্বা সময় অনুপস্থিত দেখেন নাই। এটা ব্যান্ড এনকারেজ করে না, তাই আজ শিরোনামহীন এখানে।
আমি ব্যাক্তিগত ভাবে চাইনা আমার জন্য ব্যান্ড সাফার করুক। আজ যদি আমার পা ভেঙ্গে যায় এবং আমি এক বা দু মাসের জন্য বিছানায় পড়ি, আমি ভাববো আমার ব্যান্ড ফ্যামিলির কথা। তারা যেন কোন ভাবেই পিছিয়ে না পড়ে, ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। যেহেতু আমরা কন্সার্ট করে টাকা নিই, তাই টাকার বেলায় ও সেটা সত্য । টাকা না নিলে গত ১৫ বছর মিউসিকে যে এত টাইম দিই, আমার ফ্যামিলি কি আপনি চালাবেন? আমার প্রথম প্রপোজাল থাকবে আমার অনুপ্সথিতিতে শো গুলো যেন ব্যান্ড করতে পারে। যেমন আমার কোন স্টুডেন্ট অথবা অন্য কোন ব্যান্ড থেকে গেস্ট হিসাবে কেউ শিরোনামহীনকে হেল্প করবে, যা অতীতে সবাই করেছে। এই প্র্যাকটিস টা আপনারা ব্যান্ড অঙ্গনে অনেক দেখেছেন। দুইজন ভোকাল যদি স্টেইজ শেয়ার করে, সেটা আরও নতুন একটা কিছু তৈরি করে। সেটা ব্যান্ড এর শ্রোতারা বরাবরই বাহবা দিয়ে এসেছে। আমাদের দেশেও অনেক দেখেছেন। আর এতটুকু বড় মন নিয়েই আমরা ব্যান্ড করি। অন্য কেউ বাজালেই আমরা ভাববো না যে আমাকে বাকিরা ভুলে গেছে। আমার জায়গা তো আছেই, এই ট্রাস্ট ব্যান্ড মেম্বারদের উপর আছে।
এবার এটা বলে রাখি আপনারা আবার ভাব্বেন না যে ব্যান্ড না করলে আমার বাসায় বাজার হবেনা। আমি আগামী ৫ বছর বিছানায় শুয়ে মুভি দেখলেও শিরোনামহীনের অন্য সদস্যদের মতই আমার টাকার অভাব বোধ হবেনা। সবাই শিক্ষিত, ওয়েল এস্টাব্লিসড, অন্যান্য প্রফেশানও আছে। বরং মিউসিক না করে অন্য প্রফেশান এ গেলে টাকা দুটা বেশিই পাবে
🙂 যারা মিউসিক করে, তারা ঠিকই বুঝে যে মিউসিক করে আমাদের দেশে কত টাকা কামানো যায়।

শিরোনামহীন বাদ দিলাম, এমন অনেক ব্যান্ড আছে আমাদের দেশে, যাদের একটা মেম্বার হয়ত এমন, যে একমাস শো না করলে হয়তো তার ফ্যামিলির কষ্ট হবে। তখন যদি একটা মেম্বার সিক থাকলেও শো করা যায়, সে তো সারভাইভ করবে। অসুস্থ মেম্বার টা কি তার কথা ভাববে না। এসব পেছনের কথা তো আর মানুষ বুঝবে না
🙂 মানুষ অসুস্থ মেম্বার ছাড়া শো করলে ছি ছি করবে, তাইনা?

ব্যান্ড অনেক সংগ্রামের একটা নাম। অনেক ছোট একটা শব্দ, কিন্তু এটা অনেক বড় মন নিয়ে ব্যাক্তি স্বার্থ দূরে রেখে করতে হয়। আপনি দুজন মিলে একটা ব্যবসা করেন না! দেখেন ঝগড়া লাগতে কয়দিন লাগে। আর ব্যান্ড এ তো ৫ জন! ২১ বছর! কল্পনাও করতে পারবেন না কতটা ডেডীকেশান আর কম্প্রমাইজ প্রয়োজন।
এখন হয়ত আপনারা বুঝতে পারছেন, তুহীন ভাই এর প্রস্তাব টা আমাদের জন্য নিতান্তই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার ছিল। এই ব্যাপারটা আমরাই এতদিন ধরে প্র্যাকটিস করে এসেছি আর আপনারা বুঝতেও পারেন নাই, আর বুঝলেও কিছু যায় আসে না। কারণ বাকিরা তো আর ভোকাল না
🙂 ভোকাল এর জন্যই আপনার যত ভালবাসা।

যাই হোক, শেষে এটা বলতে চাই, এত বছর আমরা এক সাথে চলেছি, আমরা জানি যে ওনার মত মানুষ তো এটা করায়েই ছাড়বে। আমরা বছরের পর বছর এটাই পেয়ে আসছি। উনি নিজে এই প্রস্তাব বাকি সবার কাছ থেকে পেয়ে ইউটিলাইজ করে এসেছেন। আজ নিজের বেলায় এটা প্রপোজ করে ওনার মনে এত দুঃখ কেন? উনি ভোকাল বলে? নাকি আমরা সামান্য “হ্যান্ডস” বলে? দুঃখ থাকলেও সামনা সামনি বলতে পারতেন। সরাসরি মিডিয়াতে বলার মানে কি। এত দিনের তিলে তিলে জমানো সম্মানের কোন মূল্য নেই? আমরা ৩ তারিখ যেদিন ওনার বাসায় গেলাম, উনি এটাও বলেছিলেন যে, “আমি হয়ত আর দু-তিন বছর পর গান গাবোনা। তখন নতুন কেউ ট্রেন এ উঠবে।” এমন একটা ব্যাপার উনি ওনার ফেইসবুকে লিখেছিলেন, চেক করতে পারেন। উনি আরও বলেন “আমরা যদি শিরোনামহীনকে সেকেন্ড জেনারেশান এ নিয়ে যেতে পারি, সেটা হবে পৃথিবীতে একটা একজাম্পল।” আমরা হাসাহাসি করে বাসা থেকে বের হয়েছিলাম আর বলেছিলাম কাকে নিয়ে কাজ করবো সবি তাকে জানাবো। পরে জানিয়েওছিলাম।
উনি ব্যাক্তিগত ভাবে আমাকে বলেছিলেন আমরা যেন শো মিস না করি। যে কোন ভোকাল এর সাথে শো করতে হলে অন্তত দু-মাস প্র্যাকটিস এর প্রয়োজন আর আমরা ভেবেছিলাম এর মাঝেও যদি তুহীন ভাই সুস্থ না হন আমরা শুধু সেখানেই শো করতাম যেখানে শিরোনামহীনকে গেস্ট ভোকাল সহ আমন্ত্রণ জানানো হবে, কারণ আমাদের দেশে সবাই শুধু ভোকাল কেই চেনে
🙂 এর মাঝে তুহীন ভাই সুস্থ হয়ে উঠলে একটা শো ও করতে হত না। সোজা এবং পরিষ্কার। তার আগে ২৬ সেপ্টেম্বর কেক নিয়ে আমি আর রাসেল ওনার বাসায় ওনার জন্মদিনে অনেক মজা করেছি। আমাদের ব্যান্ড এর ফেইসবুক পেইজ এ গেলে আপনারা তার ছবি দেখতে পারবেন।

ওনার ধারনা যে আমরা আগেই ভোকাল ঠিক করেছি, যা সম্পূর্ণ ভুল। আমরা গেস্ট ভোকাল খোঁজা শুরু করেছি ওনার বাসা থেকে বের হবার পর। আমার মনে হয় যে হার্ট এটাক পরবর্তী সময়ে নানা নেতিবাচক চিন্তাকে সত্যি ভেবে অতি উত্তেজনা থেকে উনি এটা করেছেন। আমাকে জিজ্ঞেস করলেই সব ভুল বুঝা বুঝির অবসান হত। উনি যা করেছেন, পরে মাথা ঠাণ্ডা হলেই হয়ত নিজের ভুল বুঝতে পারবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে এত কষ্ট করে এত বড় গল্প পড়ার জন্য। তার পরেও যদি আপনি ব্যাপারটা বুঝতে না পারেন, তাহলে বুঝে নিতে হবে ব্যান্ড আপনার জন্য না। আমাদের দেশে অসংখ্য ভালো সলো শিল্পী আছেন, তাদের গানই আপনার শোনা উচিৎ
🙂

Comments
Post a Comment