শিরোনামহীন ব্যান্ডের দলনেতা জিয়াউর রহমান জিয়া এবং ভোকাল তানযীর তুহিন পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে পড়ুন ।
একটি ব্যান্ডের ভোকাল যখন নিজেকে অনেক বেশি দক্ষ বা জনপ্রিয় মনে করে তখন একটা ব্যান্ডে ভাঙন ধরা তেমন একটা অস্বাভাবিক কিছু না। তখন ব্যান্ডে ভাঙন টা একরকম কাঙ্খিত ব্যাপার হয়ে উঠে। তারপরে ও আমরা অনেক চেষ্টা করছি ব্যান্ডে এক সাথে মিলেমিশে থাকতে। কারণ বর্তমানে আমাদের ব্যান্ডের কালচার এর অবস্থা তেমন একটা সুবিধা জনক অবস্থানে নেই। আমাদের চোখের সামনেই দেশের অনেক বড় বড় ব্যান্ডে ভাঙন ধরেছে। তাই আমরা চেয়েছিলাম আমাদের ভালোবাসার ব্যান্ড শিরোনামহীন অটুট বন্ধনে টিকে থাকুক। কিন্তু এখন এইটা ও হয়তো শেষমেশ আর সম্ভব হচ্ছে না। ব্যান্ড ভাঙার যন্ত্রণা আর ঘর ভাঙ্গার যন্ত্রণা প্রায় একই বা তার থেকে বেশি যন্ত্রণার। এভাবেই আমাদের বলছিলেন শিরোনামহীন ব্যান্ডের দলনেতা জিয়াউর রহমান জিয়া।
সম্প্রতি শিরোনামহীন ব্যান্ড ছেড়েছেন ব্যান্ডটির ভোকাল তানযীর তুহিন। তানযীর তুহিন তার
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে তার ব্যান্ড ছাড়ার কথা ঘোষণা করেন। এ ছাড়া ও তিনি শিরোনামহীনের অন্য সদস্যদের 'লোভী' বলে ও আখ্যায়িত করেন।
ব্যান্ড ছাড়া প্রসঙ্গে তানযীর তুহিন আমাদেরকে বলেছিলেন ,আমার ব্যান্ড মেম্বারদের কাছে বন্ধুত্ব না ,তাদের কাছে টাকাটাই মুখ্য। অথচ আমরা বিশ্বাস করতাম ব্যান্ড মানে বন্ধুত্ব।আমি মনে করি যারা ব্যান্ড মানে বন্ধুত্ব এটা বোঝে না,তাদের সঙ্গে থাকার চেয়ে না থাকাটাই বেশি ভালো বলে আমার মনে হচ্ছে।
বেসিক্যালি গান করি নিজের ভালো লাগা থেকে: তানযীর তুহিন
তানযীর তুহিন আরো জানান,গত ২১ সেপ্টেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন তিনি। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি ছিলেন তিনি। তার হার্টের রক্তনালিতে ক্ষুদ্র একটা ব্লক পাওয়া গেছে। যার কারণে অস্ত্রোপচার লাগেনি। চিকিৎসকরা বলেছেন, ওষুধ খেলেই ঠিক হয়ে যাবে ব্লকটা।
তানযীর তুহিন হাসপাতালে ছিলেন চার দিন।তবে চিকিৎসকেরা আমাকে বলেছিলেন, এক মাস গান থেকে দূরে থাকতে হবে । কিন্তু আমার ব্যান্ড মেম্বার এই বিষয় টা সাধারণ ভাবে নিতে পারে নি। তারা এক মাসে তিন চারটা শো থেকে যে পরিমান টাকা আসবে তার মায়া ছাড়তে পারছিলো না কোনো ভাবেই ।
তানযীর তুহিন আরো বলেন আমি নিজের অসুস্থতাকে ধন্যবাদ জানাই।এটা ভাবতেই আমার লজ্জা লাগছে যে এই মানুষগুলো আমার পরিবারের সদস্য ছিল। আমরা একসঙ্গে এতদিন অনেক কাজ করেছি। তাদের এই রূপ চেহারাটা আমি অসুস্থ না হলে কখনো দেখতে পেতাম না।আমার ব্যান্ডের সদস্যরা আমার বাসায় ২ অক্টোবর এসেছিলেন।তাদের দেখে আমি ভেবেছিলাম ওরা আমাকে দেখতে এসেছে। কিন্তু একটু পর তাদের সাথে কথা বলে আমি তাদের উদ্দেশ্য কি তা বুঝতে পারি। তারা লাভ ক্ষতির হিসেব করতে এসেছেন একটা অসুস্থ মানুষের সঙ্গে ,যেটা আমার কাছে খুবই বেদনাদায়ক বলে মনে হয়েছে। এমনটা আমি কখনো কল্পনা ও করিনি তারা এমন কিছু করতে পারবে আমার সাথে।
এরপর পাল্টা অভিযোগ আনেন শিরোনামহীন ব্যান্ডের দলনেতা জিয়াউর রহমান জিয়া।তানযীর তুহিনকে আত্মকেন্দ্রিক বলে উল্লেখ করে আমাদেরকে তিনি বলেন তুহিন নিজের ভেতরে ঝামেলাটা অনেক দিন ধরেই লালন করছে।তা না হলে হঠাৎ করে সে এমন নোংরামি করত না।এইটা আমার কখনো আশা করি নি ।তানযীর তুহিন অসুস্থ হওয়ার পর আমরা তার বাসায় যখন গেলাম,তখন তিনি নিজেই বলেছেন, তার গানে ফেরাটা এখনো নিশ্চিত নয়।এমনকি তানযীর তুহিন বলেছে তার বয়স ৪৫ বছর পার হওয়ার পর আর গান করারও কোনো ইচ্ছা নেই এমনটাই পরিষ্কার করে বলেছিলো সে।
আর এই কারণেই তানযীর তুহিন বলেছিলেন ব্যান্ডের স্বার্থেই নতুন করে প্রস্তুতি নিতে। আমরা ও তাই করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম কিন্তু এখন সকল কিছু তিনি তালগোল পাকাচ্ছেন। এমনটা কেন করছে তা জানা নেই আমাদের।
তানযীর তুহিন দাবি করেছিলেন তিনি শিরোনামহীনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং ব্যান্ডে গাওয়া প্রায় সব গান তার গাওয়া।এই কথা গুলোর কোন সত্যতা নেই বলে জানান শিরোনামহীন ব্যান্ডের দলনেতা জিয়াউর রহমান জিয়া।
ব্যান্ডের দলনেতা জিয়াউর রহমান জিয়া আরো বলেন শিরোনামহীন ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর তানযীর তুহিন দলে যোগ দেন ২০০০ সালে। শিরোনামহীন’ প্রতিষ্ঠার চার বছর পর কেউ যদি দাবি করে যে সে ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, তাহলে কিছু আর বলার থাকে না ।আর তানযীর তুহিন নিজের বলে যে গানগুলোর স্বত্ত্ব দাবি করছেন তা কীভাবে সম্ভব হলো সেটাই বুঝতে পারছি না। শুধু কণ্ঠ দিয়ে যদি গানের স্বত্ত্ব দাবি করা যেত তাহলে তো নজরুল, রবীন্দ্র সংগীত বলে পৃথিবীতে কিছু নেই। আর একটা বিষয় অবশ্যই ঠিক তা হলো সব গান সে গেয়েছে। কিন্তু কম্পোজিশন, লিরিক্স তো আমার। তাতে এইটাই প্রমাণিত হয় যে এটা আমাদের গান। কপিরাইট আইনও অবশ্যই এইটাই বলবে। ”
তানযীর তুহিন বলেন, “বন্ধুত্ব না, ওদের কাছে টাকাটাই মুখ্য। অথচ আমাদের ধারণা ছিল ব্যান্ড মানে বন্ধুত্ব।আর যারা ব্যান্ড মানে বন্ধুত্ব এটা বোঝে না তাদের সঙ্গে থাকার চেয়ে না থাকাটাই বেশি সঙ্গত বলে আমি মনে করছি।”এক মাসে তিন চারটা শো থেকে যে কয়েকটা টাকা আসবে তার মায়া ছাড়তে পারেননি তারা'।তুহিনের এই বক্তব্য উল্লেখ করা হলে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ব্যান্ডের দলনেতা জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, শিরোনামহীনের সকল মেম্বার তার কথায় ভীষণ মর্মাহত। কারণ আমরা টাকার কাঙাল না। আমাদের পারিবারিক অবস্থা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, এমন না যে আমরা শুধু টাকার পেছনে ছুটব।এটা বলা আমাদের জন্য মানহানিকর।তুহিনের কি সেই বিষয় মনে নেই, জয় বাংলা কনসার্টের আগের রাতে আমার মা মারা যান, তার পরও আমি মঞ্চে উঠেছি ব্যান্ডের স্বার্থে। সেই সময় ও কি আমার ভেতর টাকার লোভ কাজ করেছিল! কনসার্ট টা তখন বাতিল করিনি,আমার দায়িত্বের জায়গা থেকে।আবার আগেও চিকিৎসার কথা বলে তুহিন তো অনেক বার দেশ এর বাহিরে গিয়েছিলো তখন তো আমরাই অনেকগুলো পূর্বনির্ধারিত শো বাতিল করেছি।এই গুলো সে কিভাবে ভুলে যায়।
ব্যান্ডের দলনেতা জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন,শুধু আমরা নয় শিরোনামহীনের শুভাকাঙ্ক্ষি যারা আছে তারা ও তুহিনের এই কথায় অনেক বেশি মর্মাহত হয়েছে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
একটা ব্যান্ডকে সে নিজের মন মতো ভুলভাবে মানুষের সামনে তুলে ধরেছে। আশা করি মানুষ সত্যটা জানতে পারবে, বুঝতে পারবে আসল ঘটনা গুলো। আমার এর থেকে আর বেশি কিছু বলার নেই।
Comments
Post a Comment