রোনালদিনহো"---- একজন হারিয়ে যাওয়া প্রমিথিউস !বিস্তারিত পড়ুন।
কিছু খেলোয়াড় থাকেন যারা দোর্দন্ড প্রতাপে মাঠে এবং ফুটবল অনুরাগী সমর্থকদের মনে রাজত্ব করেন। দেশ-কাল-পাত্র-সীমানার উর্দ্ধে উঠে তারা নিপুণ শিল্পীর মতো ফুটবল দিয়ে বিশ্ব শাসণ করতে পারেন । সে রকম কোন খেলোয়াড়কে নিয়ে হাজার শব্দের কোন দীর্ঘ রচনাও অনেক কম মনে হয় । তারপরও আমরা দুঃসাহস দেখাই ।
আমিও দেখালাম । রোনালদোর পর নিকট অতীতে ব্রাজিলের সবচাইতে প্রিয় এবং যোগ্য খেলোয়াড়টিকে নিয়েই আজকের এ লেখা । এই দুঃসাহসটুকুকে সহজভাবে নেয়ার অনুরোধ রইলো ।
► জন্ম ও শৈশব :
২১শে মার্চ,১৯৮০ সালে ব্রাজিলের সমুদ্র তীরবর্তী শহর Porto Alegre তে এক ফুটবল অন্তপ্রাণ পরিবারে জন্ম নেনRonaldo de Assis Moreira । তার নিকনেম হলো ‘গাউচো’ ( ব্রাজিলের দক্ষিণের এই অংশে এই গোত্রটির নামের সাথে এটি লাগানো থাকে ) ।
যে দেশে ফুটবল হলো ‘পূজা’ আর প্রতিটা মানুষ তার পূজারী ...সেখানে প্রতিটা পরিবারই ফুটবল অন্তঃপ্রাণ । বাবা জোসে মোরেইরা একজন প্রফেশনাল ফুটবলার ছিলেন..পাশাপাশি একটি শিপইয়ার্ডে ওয়েল্ডিং এর কাজ করতেন । তার মা প্রথম জীবনে কসমেটিকস্ পণ্য বিক্রয় করলেও পরে নার্সের কাজ জুটিয়ে নেন । বড় ভাই রবার্তোও একজন প্রফেশনাল ফুটবলার হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছিলেন । ব্রাজিলে গড়পড়তা সব পরিবারেই এমন ফুটবলার আছে .... তবে বিশ্বমানের হয়ে ওঠে অল্প ক’জনই ।
জন্মাবার পর থেকে সত্যিকার অর্থেই ফুটবল তাকে ঘিরে ছিলো ।
( “আমি এমন এক পরিবার থেকে এসেছি যেখানে প্রতিমুহূর্তে ফুটবল নিয়ে আলোচনা হতো । আমার চাচা,বাবা,ভাই সবাই ফুটবলার ছিলেন । এমন একটি পরিবেশে বেড়ে ওঠার ফলে আমি সবার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি । সময়ের সাথে সাথে আমি নিজেকে ফুটবলে আরও বেশি করে সঁপে দিতে চেয়েছি” –রোনালদিনহো )
ছোটবেলায় তার আদর্শ ছিলেন তার বাবা । মাত্র ৮ বছর বয়সে বাবাকে হারাতে হলেও ... রোনালদিনহোর মধ্যে এক আদর্শিক ফুটবলার, একজন ভালো মানুষের বীজ তিনি বুনে দিতে পেরেছিলেন ।
( তিনি আমার ‘ব্যাক্তিগত’ জীবনে এবং সমগ্র ক্যারিয়ারে একজন আদর্শিক ব্যাক্তিত্ব ছিলেন । তিনি আমাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দিয়েছিলেন। “মাঠের বাইরে—সঠিক কাজটি করো এবং একজন সৎ ও স্পষ্টবাদী হও । মাঠের মধ্যে---ফুটবলটা যতটা সম্ভব সহজভাবে খেলার চেষ্টা করো ।“ তিনি সবসময় বলতেন, সবচেয়ে জটিল কোন কাজ যেটা তুমি করতে পারো সেটা হলো, ফুটবলটাকে সহজভাবে নাও ।“ –রোনালদিনহো )
ব্রাজিলের বিখ্যাত সব খেলোয়াড়েরাই নানান প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে বেড়ে উঠেছেন । তার মধ্যে ‘দারিদ্রতা’ একটি কমন ফ্যাক্টর । বস্তি এলাকায় বেড়ে ওঠার সুবাদে খেলার জন্য ঘাসের মাঠ ছিলনা.... তাদের খেলতে হতো বালির ওপর । এর ফলে‘ফুটসাল’ খেলেই তাদের ফুটবলের প্রথম পাঠটা নিতে হতো । এই ফুটসালই রোনালদিনহোর ইউনিক স্টাইল, বলের উপর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা তৈরী করতে সাহায্য করেছে । এছাড়া মাঠে তার প্রতিটা মুভ, বলকে স্পর্শ করার চতুরতা ‘ফুটসাল’ খেলেই আয়ত্ব করা ।
মাত্র ৭ বছর বয়সে তিনি অর্গানাইজড ফুটবল খেলা শুরু করেন । তার সহখেলোয়াড়দের মধ্যে তিনিই ছিলেন সবচাইতে ছোট...সেটা বয়সের অনুপাতে আরও ছোট । এখানেই এক খেলোয়াড় তাকে প্রথম ‘Ronaldinho’ নাম দেন । যার অর্থ ‘’ছোট Ronaldo” । পরবর্তীতে জাতীয় দলে ঢোকার পর সেখানে আরেক লিজেন্ড ‘Ronaldo’ অলরেডি রাজত্ব করছিলেন । তাই পাকাপাকিভাবে ‘Ronaldinho’ নামটি তার সাথে জড়িয়ে যায় ।
১২ বছর পার হবার আগেই তিনি ব্রাজিলের সেরা উঠতি প্রতিভা হিসেবে সুনাম কুড়ান । ১৩ বছর বয়সে একটি প্রতিযোগীতামূলক ম্যাচে একাই ২৩ গোল করেন !!! রিডিকুলাস !! ম্যাচের ফল ছিল ২৩-০ !! ১৯৯৭ সালে ব্রাজিল অনূর্ধ-১৭‘যুব বিশ্বকাপ’ দলে ডাক পান । চ্যাম্পিয়ন ট্রফির পাশাপাশি তিনি হন টূর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় !! তার ঠিক ক’দিন পরেই প্রথমবারের মত প্রফেশনাল ফুটবলে ব্রাজিলিয়ান লীগের অন্যতম সেরা দল ’গ্রেমিও’র সাথে চুক্তিবদ্ধ হন ।
► প্রফেশনাল ক্যারিয়ার (লীগে ) :
নাউ গাইজ, উই আর এট দ্যা বিগিনিং অফ আওয়ার রাইড । উপরের লেখাগুলো পড়ে বিরক্ত হয়ে গেছেন নিশ্চয়ই । তাহলে খুব গভীইইইর একটা নিঃশ্বাস নিন ...বেশিক্ষণ আটকে রাখবেন না... ছেড়ে দিন । এরপর শুরু করুন
☼ গ্রেমিও :
গ্রেমিওর যুবদলের হয়ে রোনির ক্যারিয়ার শুরু হয় । ১৯৯৮ সালে ব্রাজিলের বিখ্যাত ঘরোয়া লীগ ‘কোপা লিবার্তাদোরেসে’সিনিয়র দলে সুযোগ পান । ১৯৯৯ সালে ক্লাবের হয়ে ৪৮ ম্যাচে ২৩ গোল করে উজ্জ্বলতা ছড়ান । এর মধ্যে ‘ইন্টারনেসিওন্যালের’ সাথে ফাইনাল ম্যাচটি ছিল অনন্য । বিপক্ষ দলে ছিলেন ৯৪ বিশ্বকাপ জয়ী ক্যাপ্টেন Dunga (এখনকার জাতীয় দলের কোচ) । ড্রিবলিংয়ে তাকে বোকা বানিয়ে রোনি’র ম্যাচজয়ী গোলটি ছিল অসাধারণ । গ্রেমিও’তে তিনি বেশ সাফল্য পান ।
২০০১ সালে আর্সেনাল তাকে কিনতে আগ্রহ দেখায় কিন্তু ওয়ার্ক পারমিট না থাকায় (কারণ তিনি নন ইউরোপিয়ন খেলোয়াড় ছিলেন এবং তখনও যথেষ্ট আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেননি ) সেটা সম্ভব হয়নি ।
[ক্লাব পরিসংখ্যান : ম্যাচ -১৪৫, গোল- ৭২, এ্যাসিস্ট-২ ]
☼ প্যারিস সেন্ট জার্মেইন (PSG) :
2001 সালেই রোনি ৫ মিলিয়ন ইউরো ট্রান্সফারে ৫ বছরের জন্য PSGতে নাম লেখান । সেখানে তাকে ২১ নম্বর জার্সি দেয়া হয় ।
৪ আগষ্ট,২০০১ এ লীগে সাবস্টিটিউট হিসেবে তার ডেব্যু হয় । পুরো বছরটাই তাকে কখনো বেঞ্চে ..কখনও অল্প সময়ের জন্য সাবস্টিটিউট হিসেবে খেলানো হয় । ১৩ অক্টোবর ‘’অলিম্পিক লিঁও’র সাথে এক ম্যাচে ১০ মিনিটের জন্য নেমেই লীগে তার প্রথম এবং ম্যাচের সমতাসূচক গোলটি করেন । লীগের মাঝ বিরতী শেষে মাঠে নেমেই পরপর চার ম্যাচে গোল করে দলে নিয়মিত হন । তার কৃতিত্বে PSG সে সিজনে “Coupe de La Ligue” নামে এক টুর্নামেন্টে সেমিফাইনালে ওঠে । কোয়ার্টার ফাইনালের দুই লেগেই গোল করেন রোনি ।
২০০২-০৩ সিজনে পূর্বের চেয়ে আরও ধারাবাহিকতা দেখাতে থাকেন । এই সিজনে প্রথম ১০ নম্বর জার্সি পান । ২৬ অক্টোবর ‘মার্সেই’ এর সাথে এক ক্লাসিক ম্যাচে ৩-১ গোলের জয়ে তিনি ২ গোল করেন । প্রথমটি ছিল অদ্ভূতূড়ে এক ‘ফ্রি-কিক’ থেকে । পরের ম্যাচেই আবারও ২ গোল । এই সিজনেই ‘’Coupe de France’’ নামক টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে ২ গোল করে দলকে ফাইনালে তোলেন । এই ম্যাচে তার পারফরমেন্স এমন ছিল যে মাঠের দর্শকরা দাড়িয়ে সম্মান জানিয়েছিল । ফাইনালে দল হেরে যায়.. লীগে ১১তম হয় PSG । ম্যানেজার লুইস ফার্নান্দেজের সাথে সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয় । সব মিলিয়ে রোনি’ দল ছেড়ে দিতে উৎসাহী হন ।
[ক্লাব পরিসংখ্যান : ম্যাচ - ৮৬, গোল- ২৫, এ্যাসিস্ট-১৮ ]
☼☼ বার্সেলোনা :
এবার শুরু করবো একজন এ্যাভারেজ মানের ফুটবলারের ‘লিজেন্ড’ হয়ে ওঠার গল্প । আনডাউব্টলি, ইট উড বি দ্যা মোস্ট এক্সাইটিং পার্ট অফ দিজ স্টোরি । রোনি’র ‘রোনালদিনহো’ হয়ে ওঠার অবিশ্বাস্য এক অধ্যায় ।
বার্সেলোনা প্রেসিডেন্ট হুয়ান লাপার্তা কথা দিয়েছিলেন’ডেভিড বেকহ্যাম’কে আনবেন । ..কিন্তু রিয়াল তাকে কিনে নিলে ‘রোনালদিনহোর’ দিকে তার নজর পড়ে । ম্যানইউর সাথে কুস্তি খেলে ৩০ মিলিয়ন ইউরোতে অবশেষে বার্সা তাকে সাইন করাতে সমর্থ হয় !
বার্সেলোনার হয়ে রোনি’র ডেব্যু হয় মিলানের সাথে আমেরিকার ওয়াশিংটনে এক ফ্রেন্ডলি ম্যাচে !!! ( o.O ) বাসর রাতেই বিড়াল মেরে দেন (মানে গোল করেন..এবং বার্সা ২-০ তে জেতে ) । বার্সায় তখন পুয়োল,জাভি, স্যাভিওলা, রিকুয়েমে, ক্লাইভার্ট, ইনিয়েস্তা খেলতেন .... ভালদেস,মেসি, ফেব্রিগাস আসি আসি করছে এবং আজকের ম্যানেজার এনরিকে তখন দলের ক্যাপ্টেন । আর লুই ফন গাল ছিলেন কোচ (এখন ম্যানইউর কোচ ) ।
লা-লীগায় সেভিয়ার বিপক্ষে ৩সেপ্টেম্বর ২০০৩ সালে তার অভিষেক হয় ফরোয়ার্ড হিসেবে (ক্লাইভার্ট এবং স্যাভিওলার সাথে আক্রমণভাগে ).... এবং সে ম্যাচেই লা লীগায় তার প্রথম গোলটি করেন । প্রায় মধ্যমাঠ থেকে বল একাই টেনে নিয়ে দু’জন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে করা শটটি গোলবারে লাগার পরও জাল খূঁজে পায় । নাটকীয় এক গোল । শুরুটা চমকপ্রদ হলেও সিজনের প্রথম ভাগের শেষদিকে রোনি ইনজুরিতে পরেন...বার্সাও ১২তম অবস্থানে থেকে ছুটিতে যায় । ছুটি শেষ করে এসে রোনি মাঠে নামেন । সেবার দলের হয়ে সর্বোচ্চ ২২ গোল করেন ( স্যাভিওলা করেন ২১ গোল ) এবং বার্সা ২ নম্বরে থেকে লীগ শেষ করে ।
৯৯ সালের পর থেকে বার্সা তখন একটা ভাঙ্গা –গড়ার মধ্যে দিয়ে নতুন করে তৈরী হচ্ছিল । ক্লাবের ইতিহাসে অন্যতম ট্রফিলেস সিজন গেছে এসময়ে । পুরোনো অনেক খেলোয়াড়কে ছেড়ে দিয়ে নিজেদের তৈরী খেলোয়াড়দের উপর ভরসা করতে বাধ্য হলো ম্যানেজমেন্ট । এতে করে দলটা সুগঠিত হতে শুরু করলো ।
২০০৪-০৫ সিজনে মায়োর্কা থেকে ২৪ মিলিয়ন ইউরোতে স্যামুয়েল ইতো, পোর্তো থেকে ডেকো’কে এবং সেল্টিক থেকেহেনরিক লারসনকে কেনা হয় । ইতো, রোনালদিনহো জুটির উপর ভর করে বার্সা লা-লীগা জিতে নেয় । চেলসির সাথে চ্যাম্পিয়নস লীগের প্রথম নক আউট রাউন্ডেই হেরে যায় ।
২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে ক্লাবের পক্ষ থেকে তাকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৯ বছরের চুক্তিতে তাকে মোট ৮৫ মিলিয়ন ইউরো অফার করা হয় ...কিন্তু সে মাত্র ২ বছরের জন্য নতুন চুক্তিতে সাইন করে ।
2004 সালের জন্য এ বছর প্রথমবারের মতো রোনালদিনহো ‘’FIFA player of the year’ হন । হন FIFPro World Player of the Year । এছাড়াও বাগিয়ে নেন European Footballer of the Year (আজকের ব্যালন ডি’ওর ) পুরষ্কার । ২০০৫ সালে একটানা দ্বিতীয়বারের মত পান ‘’FIFA player of the year’ (রোনালদো এবং জিদানের সাথে সর্বোচচ সেই সময়ে ) ।
১৯ নভেম্বর ক্লাসিকোর প্রথম লেগে বার্নাব্যুতে রিয়ালের সাথে ৩-০ গোলের জয়ে রোনি করেন ২ গোল । তার দ্বিতীয় গোলের পর রিয়াল সমর্থকরাসহ মাঠের সবাই দাড়িয়ে সম্মান জানায় !!! এটা এতোটাই রেয়ার ছিল যে, ম্যারাডোনার পর রোনালদিনহোই রিয়ালের মাঠে এই সম্মান পেলেন । ( “আমি কখনোই এটা ভুলবোনা কারণ প্রতিপক্ষ সমর্থকেরা যখন এভাবে সম্মান জানায়, এটা যে কোন ফুটবলারের জন্যই বিষ্ময়ের” –রোনালদিনহো )
ফ্রাঙ্ক রাইকার্ডের অধীনে ইতো, মেসি এবং রোনালদিনহো এক নতুন বার্সাকে তুলে ধরে ২০০৫-০৬ সিজনে । এই সিজনটাকে রোনালদিনহোর ক্যারিয়ারের বেস্ট সিজন ধরা হয় । ১৪ বছর পর বার্সা চ্যাম্পিয়নস লীগ জেতে (১৭মে,২০০৬—বিপক্ষ আর্সেনাল ) । তার ঠিক দু’সপ্তাহ আগেই জেতে লা-লিগা । ২৬ গোল করে লা-লিগা শেষ করে (৭গোল চ্যাম্পিয়নস লীগে ) । UEFA Team of the Year এ সিলেক্টেড হন এবং তৃতীয়বারের মত UEFA Club Footballer of the Year নমিনেশন পান । এছাড়াও FIFA World XI এ জায়গা পান ।
২০০৬-০৭ সিজনের শুরুতে ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে বাই-সাইকেল কিকে এক গোল করেন। এবছর বার্সা Club World Cup ট্রফিতে রানার্স আপ হয় এবং রোনি ব্রোঞ্জ বল পান । পরের দিন 2006 FIFA World Player of the Year রেজাল্টে তৃতীয় হন । এই সিজনেও রোনি লা-লিগায় ২১ গোল করেন । পয়েন্ট সমান হওয়ায় হেড-টু-হেড রেজাল্টে লা-লীগা জেতে রিয়াল ।
২০০৭-০৮ সিজনে বার্সার হয়ে ক্যারিয়ারের ২০০তম ম্যাচ খেলেন । এই সিজনের অনেকটা সময় ইনজুরিতে কাটাতে হয় । লাপার্তা রোনির সাথে কথা বলেন এবং রোনি ক্লাব ছাড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন । ম্যান সিটি তাকে কিনতে আগ্রহ দেখায় ।
২০০৮ সালের জুনে রোনি বার্সা ফ্যানদের উদ্দেশ্যে একটি খোলা চিঠিতে ক্লাব-সমর্থকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বার্সায় কাটানো তার ৫ বছরকে ক্যারিয়ারের সেরা বলে উল্লেখ করেন । এটা ছিল একটা বিষাদময় মুহূর্ত এবং পরবর্তীতে একটা সাক্ষাৎকারে তিনি আফসোস করেন যে মেসির সাথে আরও দীর্ঘদিন খেলার সুযোগ থাকার পরও তিনি তা গ্রহণ করেননি ।
........এরপরই মূলত: তার পতনের শূরু । ক্যারিয়ারের গ্রাফ নামতে থাকে নিচে । বার্সা থেকে তিন বছরের চুক্তিতে ৬.৫ মিলিয়ন ইউরোতে এসি মিলানে নাম লেখান । সেখানে প্রথম সিজেন ২৩ ম্যাচে করেন ১০ গোল । পরের সেজনে করেন সিরি-আর সর্বোচ্চ এ্যাসিস্ট ।
২০১১ সালে মিলান ছেড়ে যোগ দেন ব্রাজিলের ক্লাব ফ্লামেঙ্গোতে । সেখানে এক বছর থাকার পর চার মাসের বকেয়া বেতন না পেয়ে রাগ করে যোগ দেন ‘অ্যাটলেটিকো মিনেইরোতে ‘... ৬ মাসের চুক্তিতে । এই ক্লাবে মোটামুটি সাফল্য পান । দলকে বেশ কয়েকটি শিরোপা জেতাতে সাহায্য করেন । ২০১৪ সালের জানুয়ারীতে মিনেইরোর সাথে চুক্তির মেয়াদ না বাড়িয়ে মেক্সিকোর ক্লাব ‘কোয়ার্তারো’তে যোগ দেন ২ বছরের চুক্তিতে । এখনও সেখানেই খেলে যাচ্ছেন ।
[ক্লাব পরিসংখ্যান : ম্যাচ - ২০৭, গোল- ৯৪, এ্যাসিস্ট-৬৯ ]
► আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার :
রোনি ব্রাজিলের সেই অল্প ক’জন খেলোয়াড়ের একজন ছিলেন যারা দেশের হয়ে সব বয়সের- সব ধরণের টুর্নামেন্টেই খেলেছেন । ১৯৯৭ সালের অনূর্ধ-১৭ দলের অংশ হয়ে তিনি ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছিলেন । রোনি তাতে ২ গোল করেন এবং ব্রোঞ্চ বল পান ।
১৯৯৯ সালে দেশের হয়ে খুব ব্যাস্ত একটা সময় পার করেন । অনুর্দ্ধ-২০ দলের হয়ে South American Youth Championship এ করেন ৩ গোল এবং ব্রাজিল তৃতীয় হয় । সেবছর FIFA World Youth Championship কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে বিদায় নেবার আগেও তিনি ৪ গোল করেন । ‘লাটভিয়ার’ সাথে এক ম্যাচে ২ গোল করেই ১৯৯৯ এর Copa América দলে অন্তভুক্ত হন । সে বছরই ব্রাজিলের Confederations Cup এর দলে জায়গা পান । কেবলমাত্র ফাইনাল ছাড়া প্রতি ম্যাচেই গোল করেন যার মধ্যে সৌদি আরবের সাথে ৮-২ গোলে জেতা ম্যাচে করেন হ্যাট্টিক !! ফাইনালে মেক্সিকোর কাছে ৪-৩ গোলে ব্রাজিলে হেরে যায় । তিনি টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ স্কোরার হয়ে গোল্ডেন বুট পান এবং সেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কার গোল্ডেন বল গ্রহণ করেন !! মূলতঃ এর পরই তিনি আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনায় উঠে আসেন ।
২০০০ সালে অনুর্দ্ধ-২৩ দলের হয়ে অষ্ট্রেলিয়ায় সামার অলিম্পিকে অংশ নেন । এর কিছুদিন আগেই Pre-Olympic Tournament এ তার অধিনায়কত্বে ব্রাজিল শিরোপা জেতে...রোনি করেন ৭ ম্যাচে ৯ গোল !! অলিম্পিকে ক্যামেরুনের কাছে কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিল হেরে যায়..রোনি করেন ৪ ম্যাচে ১ গোল !
২০০২ সাল .... বিশ্বকাপের বছর ...রোনির প্রথম বিশ্বকাপও। রোনালদো এবং রিভালদোর সাথে রোনির ত্রয়ী’র নামকরণ হয়“Three R’s” । রোনি ৫ ম্যাচে ২ গোল করেন ...অনেকগুলো অ্যাসিস্ট করেও গোলে সাহায্য করেন । রোনালদিনহোর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের সবচেয়ে আলোচিত ম্যাচটি ছিল কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের সাথে ... যাতে ব্রাজিল ২-১ গোলে জেতে । ওয়েনের গোলে ব্রাজিল তখন ১-০ গোলে পিছিয়ে...... প্রায় মাঝমাঠে বল পেয়ে একাই কোল’সহ আরও দুজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ডিবক্সে রিভালদোকে বল দেন...গোল । ম্যাচের ৫০ মিনিটে প্রায় ৪০ গজ দূর থেকে বাঁকানো ফ্রি-কিকে দলের পক্ষে দ্বিতীয় গোলটি করেন যা দর্শক-খেলোয়াড় সবাইকে হতবম্ভ করে দেয় !! এই রকম একটি গোলের স্বপ্ন সব খেলোয়াড়ই দেখে থাকেন । পরে সমালোচিত একটি ফাউলের সিদ্ধান্তে লাল কার্ড পেয়ে মাঠ ছাড়েন এবং সেমিফাইনালে মাঠে বসে থাকতে হয় । জার্মানিকে ২-০ গোলে হারিয়ে ব্রাজিলে পাইনালে পৌঁছে এবং পঞ্চম বারের মতো শিরোপা জেতে ।
2003 Confederations Cup এবং 2004 Copa América ব্রাজিলের বেশ খারাপ যায় । ২০০৫ এর Confederations Cup এ রোনি দলের নেতৃত্ব দেন এবং ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে ৪-১ গোলে হারিয়ে দলকে শিরোপা জেতান । রোনি করেন ৩ গোল এবং মোট ৯ গোল নিয়ে টুর্নামেন্টের all-time scorer এর খাতায় নাম লেখান ।
২০০৬ বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন “ম্যাজিকাল কোয়াট্রেট” এর অংশ (আদ্রিয়ানো, কাকা ও রোনালদোসহ) । জোগো বোনিতোর ছন্দ ভুলে ব্রাজিল কোয়ার্টার ফাইনালেই মুখ থূবড়ে পড়ে । রোনিসহ দলের সবাই ভালো খেলতে ব্যার্থ হন । এই ফলে ব্রাজিলজুড়ে দল নিয়ে সমালোচনা শুরু হয় । 2007 Copa América দলে জায়গা হারান । পরে 2008 Summer Olympics এ বেইজিং এ পুনরায় দলকে নেতৃত্ব দেন । সেমিফাইনালে হেরে যাবার আগে করেন ২ গোল এবং দল ব্রোঞ্জ মেডাল জেতে ।
২০১০ বিশ্বকাপের দলে দুঙ্গার সুদৃষ্টি পেতে ব্যার্থ হন । পাতো, আদ্রিয়ানো, রোনালদোকেও বাদ দেয়া হয় । ব্রাজিল কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে যায় । ২০১১ সালে কোচ মেনজেস এর অধীনে দুটি প্রীতি ম্যাচে দলে ফেরেন এবং কোচের আস্থা অর্জন করেন ভালো খেলে । ২০১৩ সালে স্কোলারীর অধীনে ইংল্যান্ডের সাথে প্রীতি ম্যাচে দেশের হয়ে ১০০তম ম্যাচটি খেলেন (আন অফিশিয়াল ম্যাচ সহ ) । সেই ম্যাচে পেনাল্টি থেকে গোল করতে ব্যার্থ হন এবং ব্রাজিল ১-২ গোলে হেরে যায় । পরে 2013 Confederations Cup এবং ২০১৪ বিশ্বকাপ দলে জায়গা হারিয়ে একপ্রকার আড়ালেই চলে যান ।
মদ-নারীর প্রতি আসক্তি... অনিয়মে জড়িয়ে পড়া, মুটিয়ে যাওয়াসহ বেশ কিছু বিতর্কের জন্ম দেন একসময় । ক্যারিয়ারের সবচাইতে কালো একটি অধ্যায়ের শুরুর সাথে সাথে তারও পতন হতে থাকে । সেই অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এলেও পুরোনো রোনালদিনহোকে আমরা আর ফিরে পাইনি ।
[জাতীয় দল পরিসংখ্যান : ম্যাচ - ৯৭, গোল- ৩৩ ]
► Quotes :
রোনালদিনহোকে তার জেনারেশনের সবচাইতে স্কিলফুল প্লেয়ার হিসেবে ধরা হয় । ESPN এক ডকুমেন্টরীতে তাকে ব্যাখ্যা করতে বলে .......
“skillful by nature, his tricks are unparalleled and he is wonderful with the ball at his feet. One of the coolest players in pressure situations" and a "fast, brash, skilful, tricky, an uninhibited playmaker" who provides "a mix of goals, assists, skills and a large repertoire of crafty moves."
আপনি যে দলেরই সমর্থক হন না কেন রোনালদিনহোকে আপনার শ্রদ্ধা করা উচিত । আমার দেখা সেরা একজন খেলোয়াড় ...বলকে দিয়ে যে ধ্রুপদি জাদু দেখাতে পারতো । ফর্মে থাকা রোনালদিনহো ছিল ফুটবলের জাদুকরদের একজন । রিসপেক্ট ফর সাচ এ ট্যালেন্ট ।
"me soccer provides so many emotions, a different feeling every day. I've had the good fortune to take part in major competitions like the Olympics, and winning the World Cup was also unforgettable. We lost in the Olympics and won in the World Cup, and I'll never forget either feeling.--Ronaldinho "“I’ve always said that from the first moment I entered the changing room, Ronaldinho and the rest of the Brazilians, welcomed me and made things easier for me. But above all, him (Ronaldinho), because he was the star of the team. I learned a lot by his side.”--Lionel Messi
তথ্যসূত্র : ১. উইকিপিডিয়া
২. Football History.com
https://cutt.ly/qyR7mHU
ReplyDelete