মিডফিল্ডার সমাচার জানতে পড়ুন বিস্তারিত।

এই মুহূর্তের সেরা কজন মিডফিল্ডারের নাম বলুন দেখি? আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, লুকা মদ্রিচ, টনি ক্রুস, পগবা, ভেরাত্তি, ভিদাল আর সম্ভবত মেসুত অজিল। এত গুলো নামের মাঝে এক অজিল বাদে আর একজনও নাই, যে কিনা ট্রাডিশনাল সেন্টার অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। একটা টাইম ছিল, যখন ট্রিকুয়ার্তিস্তাই ছিল মাঠের সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ প্লেয়ার, দলের প্রাণ। আর অন্যদিকে সেন্টার মিডফিল্ডাররা বল পাস সাপ্লাই দিবে তাকে, আর একই সাথে করবে ডিফেন্সে সাহায্য করবে, উপরের কোন প্লেয়ার বল হারালে রিকোভারের চেষ্টা করবে। আর আজকাল দেখা যায়, ট্রিকুয়ার্তিস্তা প্রায় গায়েব, সেন্টার মিডফিল্ডারই সব কাজের কাজী। উদাহরণ দেই টনি ক্রুসের। ট্যাকল করতেসে, বল নিয়ে পাস-পাস খেলতেসে, আবার উপরে থ্রু দিতেসে, উইং এ সাপ্লাই করতেসে, এক কথায় ফুল প্যাকেজ একই মোড়কে। যদিও একটা কথা বাস্তব, Jack of all trade is a master of none. . এর আগে, ইউনাইটেড লিজেন্ড স্যার ববি চার্লটন যখন খেলতেন, তখন নরমালি খেলা হত ৪-২-৪ ফরমেশনে। যাতে সামনের দিকের চারজনের মাঝে দুজন হলো উইঙ্গার। একজনের কাজ গোলপোস্টে বল ঢুকানো। বাকি একজন কি করবে, সেটা তার উপর ডিপেন্ড করে। স্যার ববি চার্লটন সেটাকেই বানিয়ে দিলেন ফুলবল মাঠের সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ পজিশন, সেন্টার অ্যাটাকিং মিডফিল্ড। ফুটবলিও ফ্যান-পন্ডিতরা খানিকদিন তব্দা হয়ে ছিলেন কি করবেন, কারণ যেভাবে মার্ক করে রাখে স্ট্রাইকারকে, ববি চার্লটন কোত্থেকে গিয়ে বল পৌঁছায় দেয় তার কাছে। এরপর দিন গেল অনেক, ম্যারাডোনা আসলো, সেই পজিশনেই খেলল আর আর্জেন্টিনালে খেলালো। বলা যায় সেন্টার এটাকিং মিডফিল্ডের প্রবর্তক চার্লটন হলেও পূর্ণতা পাওয়াইসে ম্যারাডোনাই। জিদান আসার পর তো আরেক খেল দেখানো শুরু করল, নানান কিসিমের ড্রিবলিং খেলা দেখানোর সাথে সাথে অসাধারণ পাস। রিসেন্ট প্লেয়ারদের মধ্যে কাকা আর হালের অজিল-সিলভা সম্ভবত লাস্ট পিস ছিল যারা প্রতিপক্ষকে নাচাইসে বা নাচাচ্ছে সেন্টার এটাকিং মিডফিল্ড থেকে। . কারণটা কি? কারণ হলো, এখন দিন বদলাইসে। সেন্টার এটাকারদের খেল শেষ করতে আনা হইসে মাস্কেরানো, ম্যাকলেলে, গাত্তুসু,বুস্কেটস, ম্যাটিচদের। কই থেকে বল সাপ্লাই করবে? সারাক্ষণ বখাটের মত পিছে পিছে ঘুরে বল নিয়ে নিবে আর নইতো পাস ইন্টারসেপ্ট করবে, সাপ্লাই অফ, লাইন কাটা। . এখন উপাই? আজকের সেন্টার মিডফিল্ডের উপরে উঠে আসা এর জন্যই। কারণ পকেট যখন ব্লক হয়ে থাকবে ডিস্ট্রয়ার তথা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারদের সিয়ে, তখন সেন্টার এটাকিং মিডফিল্ডারের তো বরফ পানি খেলা ছাড়া কোন কাজ নাই। এখন কথা হলো "পকেট" জিনিসটা কি? একটা ফরমেশনে এটাক-মিডফিল্ড-ডিফেন্স এই তিন জিনিসের সবার মাঝে কিছু ফাঁকা যায়গা থাকে জোনাল মার্কিংএর সময়। প্রতিপক্ষের ডিফেন্স আর মিডফিল্ডের মাঝখানের ফাঁকটার নামই হলো পকেট। এই পকেটে পাস আসে মিডফিল্ড থেকে, পকেটের মালিক সেন্টার এটাকিং মিডফিল্ডার বল পার করে দেয় সামনে থাকা স্ট্রাইকারদের কাছে। . যাই হোক,কাজের কথাই আসি।সেন্টার এটাকিং মিডফিল্ড আউটডেটেড হয়ে গেলে উপরে বল সাপ্লাই করার উপাই কি? এর উপাই কয়েকটা। এর মাঝে একটা হল ডিপ লাইং প্লেমেকার খেলানো। সাবেক চেলসির উদাহরণে আসি, যে সিজনে ফাব্রেগাস ২৩ টা এসিস্ট করল, ওই সিজনের কথা। ম্যাটিচের সাথে ফাব্রিগাস খেলত সেন্টার মিডফিল্ড রোলে। নামে সেন্টার মিডফিল্ডার হলেও ন্যাচারাল ক্রিয়েটর হল ফাব্রেগাস। নিচে থেকে বল নিয়ে উপরে এটাক করতে উঠে যাইত, হ্যাজার্ডরে বল দিত, নয়তো স্পিডি উইলিয়ানকে বল সাপ্লাই দিত। দুজনের একজন বল নিয়ে উপরে দৌড় দিয়ে পৌঁছাই দিত কস্তার কাছে। আর নয়তো ফ্যাব্রেগাস নিজেই গিয়ে সাপ্লাই করত সামনে থাকা কস্তাকে। এখন নামে এটাকিং মিডফিল্ডার না হওয়ায় অন্য দলের কেউ আগে থেকে মার্ক করে রাখার বিষয়টা মাথায় আনত না, আবার ফ্রি রোলে উপরে খেলত হ্যাজার্ড, তাকে মার্ক না করলেও বিপদ। যদিও ডিফেন্সিভলি ম্যাটিচকেই সব সামলাইতে হইত, তবুও ফাব্রেগাস ফাঁকা মাঠে বল সাপ্লাই করতে ভালোই ওস্তাদি দেখাইসিল সেবার। . আরেক উপাই হলো ফলস টেন। ফলস টেন সম্পর্কে নানান যায়গায় নানান জিনিস পাইলেও সবচেয়ে আদর্শ কথা যেটা লাগসে সেটা হলো, ফলস টেনরা এটাকিং মিডফিল্ডারের যায়গায়ই শুরু করবে। কিন্তু খেলা শুরুর পর ফ্রি রোম করতে করতে কোন চিপাই ঢুকে যাবে। মনে আছে কি, শুরুতে ডিস্ট্রয়ারের কথা বলেছিলাম? ওই ডিস্ট্রয়ার সেই চিপাই ঢোকা আনমার্কড ফলস টেনের পিছে দৌড় দিবে। এদিকে।মাঝখানের ফাঁকা যায়গা তথা পকেট/জোন ১৪ যাই বলি সেখানে চলে আসবে হয় উইং থেকে নয়ত নিচে থেকে। এখানে বেস্ট এক্সাম্পল গুলো হলো, কৌতিনহো,হামেস রদ্রিগেজ আর হ্যাজার্ড এরা। বেনিতেজের সময়ে যখন বেল নাম্বার টেন রোলে খেলত, তখন হামেস ডান সাইডে ছিল। রোনালদো গোল করার জন্য উপরে উঠে গেলে বামের ফাঁকা যায়গায় বেল চলে যেতে পারত আর তখনই জোন-১৪ ফাঁকা হয়ে যাইত। সেখানে হামেসের গিয়ে খেলা ফলস-টেন রোল প্লে করা বলা যায়। আবার হ্যাজার্ডের ক্ষেত্রে, উইলিয়ান/অস্কার বাঁ পার্শে যেত আর মাঝের ফাঁকা যায়গায় চলে আসতে পারত হ্যাজার্ড। এখন ইনভার্টেড উইংগার আর এই ফলস টেনের মাঝে পার্থক্য কি? দুইটাই তো উইং থেকে সেন্টারে আসতেসে দেখা যায়। ইনভার্টেড উইংগার-ফলস টেন প্রায় কাছাকাছি জিনিস। ইনভার্টেড উইংগারের ক্ষেত্রে তারা হয় ৪-৩-৩/ ৪-২-৩-১ এ খেলে থাকে। জোন ১৪ এমনিতেই ফাঁকা থাকে তাদের জন্য। কাট ইন করে শুট করা তাদের মেইন কাজ। আবার বল সাপ্লাইও করে, "ডিপেন্ডস অন মেন্টালিটি"। আর ফলস টেনের কাজ নাম্বার টেন তথা ট্রিকোয়ার্তিস্তার মত খেলা ফাঁকা জোন ১৪ তে এসে। . এখন জোন ১৪ জিনিসটা কি? ফুটবল মাঠকে ৬ বাই ৩ করে মোট ১৮ ভাগে ভাগ করা হইসে ট্যাকটিকাল ডিসিশন নিতে যাতে সুবিধা হয়, সেই স্বার্থে। সেখানের পেনাল্টি বক্সের সামনের সেন্ট্রাল এড়িয়াটা হলো জোন ১৪, যেখান থেকে এক্সপেক্ট করা হয়, ম্যাক্সিমাম আসিস্ট হবে। অবাক করার মত হলেও সত্য, ১৯৯৮-২০০০ সময়ে ফ্রান্স দলের ৮১% গোলের সূত্র জোন ১৪। অবশ্য সে সময়টায় ওখানে খেলত জিদান। . আরেকটা জিনিস হলো, দ্যা পকেট। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ড এ কেউ থাকলে পকেট কিভাবে ক্রিয়েট হবে? এ ক্ষেত্রে বেস্ট এক্সাম্পল হলো বার্সার গেম প্লে। ইনিয়েস্তা-রাকিতিচ প্রায়ই দেখা যায় বল ধরে নিয়ে থাকে। সেই বল আবার ফিরে পাওয়ার জন্য অন্য দলের সেই ডিস্ট্রয়ার বা সেন্টার মিডফিল্ডার উপরে উঠে আসে আর পকেট ক্রিয়েট হয়। এই বল নিয়ে থেমে যাওয়াটাকে বলা হয়, "the pause" তথা লা পাউসা। আর সম্ভবত এর মাস্টার হলো আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা। এই পকেট ইউটিলাইজ করতে নিচে নেমে আসে লিও মেসি সাময়িক ফলস-১০ হয়ে বল নিয়ে উপরে উঠে যায়।

Comments

Popular posts from this blog

শাবনূরের লাইফস্টাইল অজানা অনেক তথ্য I আসল নাম | উচ্চতা I ওজন I শারীরিক পরিমাপ | বয়স | পড়ালেখা | স্বামী | ক্যারিয়ারের অর্জন | বাড়ি | জীবনী এবং উল্লেখযোগ্য সিনেমায় ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্ককে জানতে অবশ্যই পড়ুন

বাংলাদেশী ব্যান্ডের আন্ডাররেটেড গান সমূহের তালিকা দেয়া হলো । নতুন কিছু গানের স্বাদ পেতে অবশ্যই পড়ুন।

আরিফিন শুভর লাইফস্টাইল অজানা সকল তথ্য ব্যক্তিগত জীবন I আসল নাম | উচ্চতা | বয়স | পড়ালেখা | স্ত্রী | ক্যারিয়ারের অর্জন | বাড়ি | জীবনী এবং কত গুলো সিনেমায় কাজ করেছেন জানতে পড়ুন