অর্থহীনের ১৮ বছরের পথচলায় সব মিলে ৪ জন ড্রামের ছিলেন তাদের সম্পর্ককে জানতে পড়ুন।

অর্থহীনের ১৯৯৮ সাল থেকে এই পর্যন্ত অর্থাৎ এই ১৮ বছরে ব্যান্ডটি অনেক চড়াই উৎরাই পার করে এসেছে। দীর্ঘ এই ১৮ বছরে ব্যান্ড লাইনআপের অনেক পরিবর্তন এসেছে। তার মধ্যে ড্রামারেরাও আছে। আজ আমরা সেইসব ড্রামারদের সম্বন্ধেই কিছুটা জানার চেষ্টা করবো।
হাসান তৌহিদুর রহমান রুমি (১৯৯৯-২০০০):
বাংলাদেশের ড্রামসের ক্ষেত্রে এক উজ্জ্বল মুখ এবং দক্ষ ড্রামার হচ্ছেন তৌহিদুর রহমান রুমি। ‘৯২ তে ‘লিজেন্ড’ ব্যান্ড ফর্ম করেন এবং ‘অন্যভূবন’ নামে একটি এ্যালবাম রিলিজ করেন। এরপর কিছুকাল নিশ্চুপ থাকার পর ‘৯৮ তে যোগ দেন ‘দ্যা ট্রাপ’ এ। তাঁর কিছুদিন পর আর্কে। ২০০০ সালে ‘আর্ক’ ত্যাগ করে যোগ দেন ‘অর্থহীন’ এ। অর্থহীনের প্রথম এ্যালবামে তাঁর কাজ খুবই উপভোগ্য। অর্থহীনে থাকাকালিন সময়েই কাজ করতে থাকেন ‘দলছুট’ ব্যান্ডে। কিন্তু ২০০১ সালে অর্থহীন ছেড়ে দিয়ে ফর্ম করেন নিজের ব্যান্ড ‘এসিড রেইন’। হার্ডরক ও ফাঙ্ক স্টাইলের এই ড্রামারের উল্লেখযোগ্য কিছু কাজ রয়েছে লেজেন্ডের ‘অন্যভূবন’, দ্যা ট্রাপের ‘ঠিকানা’, অর্থহীনের ‘ত্রিমাত্রিক’, বাপ্পার ‘ধুলোপড়া’, ‘চিঠি’ প্রভৃতি এ্যালবামে। তিনি ‘পার্ল এক্সপোর্ট’ নামের ড্রামকীট ব্যাবহার করেন।
মুনতাসির মামুন শুভ (২০০১-২০০৭):
ইনি অর্থহীনের যে কয়জন ড্রামার আছেন তাদের মধ্যে অন্যতম ট্যালেন্টেড এবং ফাস্টেস্ট ড্রামার। বাংলাদেশের অনেক বিখ্যাত সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব বলেন শুভ বাংলাদেশের অন্যতম ফাস্টেস্ট ড্রামার। ত্রিমাত্রিক এলবামের পরে রুমি ভাই তার ব্যক্তিগত কাজের জন্য বের হয়ে যান। ঐ সময় ডেথ্রো ব্যান্ডে(শিশির ভাইয়ের পুর্বের ব্যান্ড) ড্রামার ছিলেন শুভ ভাই। বেজবাবা তাকে অর্থহীনে যোগ দিতে বলেন এবং শুভ ভাই ২০০১ সালে অর্থহীনে যোগ দেয়। শুভ ভাই ডাবল বেজ প্যাডলের উদ্ভাবক এবং তিনি অসাধারণ নৈপূন্যের সাথে ব্যবহার করেন গুটি-২,নির্বোধ,আশটে সত্য,সাত দিন,গুটি ফ্রম হেল,মৃত্যুর শহর ইত্যাদি একইসাথে তিনি অসামান্য ঠান্ডা নৈপুণ্য দেখান এপিটাফ,বয়স,একটা গান দাও,রাতের ট্রেন ইত্যাদিতে। নতুন দিনের মিছিলে এলবামের কৃষ্ণচূড়া গানটায় তিনি বেজও বাজিয়েছেন। নতুন দিনের মিছিলে এলবামের ২৮:৩১ মিনিটের সাত দিন গানটিতে শুভ ভাই তার অসাধারণ নৈপুণ্যের আরেক্টি নমুনা দেখিয়েছেন। তিনি এছাড়াও অর্থহীনের মিক্সড এলবামের গান গুলোতে কাজ করেছেন যেগুলোর মধ্যে সূর্য,অতীত,প্রতিরূপ,ইতিহাস,যুদ্ধ,হলো/আত্মহনন ২ উল্লেখযোগ্য। শুভ ভাইয়ের সম্বন্ধে বেজবাবা বলেন "শুভ অনেক ফাস্ট ডাবল বেজ প্যাডেল বাজায় আমার মতে সে বাংলাদেশের অন্যতম ফাস্টেস্ট ড্রামার। এরপর শুভ ভাই ২০০৭ সালে কিছু সমস্যার কারনে অর্থহীন ত্যাগ করেন এবং বর্তমান প্রজন্মের আরেকটি ফেমাস অল্টারনেটিভ রক ব্যান্ডে আর্বোভাইরাসে যোগ দেন। আর্বোভাইরাসের সাথে শুভ ভাই ২০১১ সালের শুরু পর্যন্ত থাকেন এবং বছরের মাঝামাঝি সময়ে তিনি আর্বোভাইরাস ত্যাগ করেন।এক নজরে শুভ ভাইয়ের ডিস্কোগ্রাফিঅর্থহীনের সাথে ৩টি এলবাম ১. বিবর্তন ২. নতুন দিনের মিছিলে ৩. ধ্রুবকমিক্সড এলবামের ট্র‍্যাকসুর্য - অনুশীলন(২০০১) অতীত - প্রজন্ম(২০০২) AOD - আগন্তুক১(২০০৩) বয়স - লোকায়ত(২০০৪) এপিটাফ - স্বপ্নচূড়া ২(২০০৪) যুদ্ধ - আগন্তুক ২(২০০৪) ইতিহাস - আগন্তুক ৩(২০০৫)
রায়েফ আল হাসান রাফা(২০০৭-২০১৫):
ওয়েল এবার আসি বাংলাদেশের মিউজিক জগতে ওয়ান অফ দ্যা ফেমাস এবং পপুলার এবং ট্যালেন্টেড মিউজিসিয়ান রায়েফ আল হাসান ওরফে আমাদের সবার প্রিয় রাফা ভাই। 'আনমনে'' গানটির ছোঁয়ায় ভেসে যাওয়া হয়নি এমন তরুণ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ইনিই আমাদের নতুন প্রজন্মের রক আইকন রায়েফ আল হাসান রাফার কথা, রাফা নামেই যিনি সবার কাছে পরিচিত। একাধারে অর্থহীন, KRAL এর ভোকাল+ড্রামার, আরেকটি বিখ্যাত ব্যান্ড ''CRYPTIC FATE'' এর গেস্ট ড্রামার, SEVERE DEMENTIA Death Metal ব্যান্ড এর ড্রামার, নিজের ব্যান্ড The Joint Family এর ভোকাল+লিড গিটারিস্ট,কাজ করছেন আরেকটি ব্যান্ড Dripping Gore। এরই সাথে কাজ করেছেন Heavy Metal Band- POWERSURGE এ অতিথি ড্রামার হিসেবে ।ছোটবেলায় নজরুল গীতি আর তবলা দিয়ে শুরু হয় মিউজিক জীবন । কয়েকদিন পরেই বড়ভাই ডাঃ সাদী মুকতাফির কাছে হাতেখড়ি হয় গীটার এর।বন্ধুদের সাথে গড়ে তুলেন Nu Metal Band- SYKOKINESIS । কিছুদিন পরেই ডাঃ সাদী মুকতাফির এর সাথে রাশিয়ান কালচারাল সেন্টারে KRAL শুরু হয় প্রথম শো দিয়ে। বেজবাবা সুমন তখন অর্থহীনের জন্য নতুন একজন ভোকালের খোঁজে। তখন রাফা অর্থহীনে যোগ দেন।অর্থহীনের ''ধ্রুবক'' অ্যালবাম দিয়ে অর্থহীনের সাথে শুরু হয় মিউজিক জীবন। ''ধ্রুবক'' অ্যালবামটিতে গাওয়া হয় ৫টি গান,''বিজয়ের গান, মরীচিকা, গুটি- From the hell, আঁশটে সত্য, সমাধি শহর''......অ্যালবামটির কাজ ব্যাপক প্রশংসিত হয়।২০০৪ সালে দীর্ঘদিনের গিটারিস্ট ''মিনহাজ আহমেদ পিকলু'' অর্থহীন থেকে বিদায় নিলে ''আশফাক উদ্দিন শিশিরের'' সাথে হাতে গীটার তুলে নেন ।২০০৪/৫ সালে অর্থহীনের দুটি গান ( বয়স, ইতিহাস) ও ২০০৬/০৭ এ তিনটি (প্রতিরূপ, Hollow, নির্বোধ) বের হয় । বয়স গানটি তরুণদের মন জয় করে নেয়, প্রতিরূপ গানটিতে রাফার গলার কাজ সকল মেটাল প্রেমীদের মন ছুঁয়ে যায় । ২০০৭ সালে অর্থহীনের দীর্ঘদিনের ড্রামার শুভ অর্থহীন থেকে বিদায় নেয়ার পর নিজের ক্যারিয়ার এরসবচেয়ে সাহসী সিদ্ধান্তটি নিয়ে নেন,অবিশ্বাস্য কম সময়ে (তিন মাস) বিশ্ব বিখ্যাত ব্যান্ড ''ড্রিম থিয়েটার'' এর তিনটি অ্যালবাম এর ড্রামস কাভার করে অর্থহীনের হয়ে ড্রামস স্টিক তুলে নেন হাতে !!!পৃথিবীতে মাত্র হাতে গোনা ড্রামার আছেন যারা একি সাথে ড্রামস এবং ভোকাল চালান । লাইভ শোতে যে কাজটি করা অতিমাত্রায় কঠিন । কিন্তু বর্তমান সময়ে রাফা অতি সহজেই কাজটি করে যান। ২০০৮ এ অর্থহীন বের করে তাদের ৫ম অ্যালবাম ''অসমাপ্ত-১''। রাফা এতদিন অর্থহীনের জন্য মেটাল গানগুলো গাইলেও এই প্রথমবারে মত মেলোডি গানে গলা দেন। বেজবাবা সুমনের লেখা আর রাফার কম্পোজিশনে ''আনমনে'' গানটি আগের সবকিছুকে ছাপিয়ে যায়, তরুণ প্রজন্মের মনে রাফা নতুন জায়গা করে নেন। অ্যালবামে আরেকটি গান ''কাঁদবে বিস্ময়ে'' ব্যাপক বিখ্যাত হয়। অ্যালবামের নামগান ''অসমাপ্ত'' এবং''নিকৃষ্ট'' গানটির কাজ প্রশংসিত হয়।''নিকৃষ্ট'' গানটি মেটাল প্রেমীদের মনে অন্যরকম জায়গা করে নেয়।২০১১ তে আগের সবকিছুকে ছাপিয়ে যায় অর্থহীনের ৬ষ্ট অ্যালবাম ''অসমাপ্ত ২''। অ্যালবামের তিনটি গান কম্পোজ করেন, বেশকিছু গানে গলা দেন, অনেকগুলো গীটার " সোলো এবং একটি সিঁতার সোলো । আনমনে ২,আবার গানটি মন ছুঁয়ে যায়। এবং ''নিকৃষ্ট_|_ ২'' গানটিতে রাফা তার সীমা ছাড়িয়ে যান।অ্যালবামের সমস্ত মিক্সিং এবং মাস্টারিং রাফা তার ব্যক্তিগত স্টুডিও ''স্টুডিও হট-বক্স'' এ করেন। তার ব্যান্ড ত্যাগ এখনো ভক্তদের কাঁদায়।
মার্ক ডন(২০১৫-বর্তমান):
রাফা ভাইয়ের আকস্মিক চলে যাওয়ার পর বেসবাবা ড্রামস স্টিক তুলে দেন মার্ক ডনের হাতে। যারা ট্রেইনরেকের ৯০৯ ভিডিওটি দেখেছেন তারা জানেন মার্ক ডন কি জিনিস। তিনি ট্রেইনরেক সহ লাস্ট এপিসোড নামে আরেকটি ব্যান্ডের ফাউন্ডিং মেম্বার। তিনি ৬ বছর ধরে এই ২টি ব্যান্ডে ড্রামার হয়ে আছেন। এছাড়াও তিনি আরেকটি মেইন্সট্রিম ব্যান্ড মেটাল মেজের গীটারিস্ট হিসেবে আছেন। মার্কের যখন ১৭ বছর বয়স তখন থেকেই তিনি ড্রাম বাজানো শুরু করেন। তার উদ্দাম ড্রাম বাজানো দেখেই বুঝা যায় বেজবাবা মানুষ চিনতে ভুল করেননি। সবাই এখন মার্কের অর্থহীনের হয়ে পার্ফরমেন্সের দিকে উদগ্রীব হয়ে তাকিয়ে রয়েছে।
POST CREDIT :শাহরিয়ার অনি আহমেদ

Comments

Popular posts from this blog

শাবনূরের লাইফস্টাইল অজানা অনেক তথ্য I আসল নাম | উচ্চতা I ওজন I শারীরিক পরিমাপ | বয়স | পড়ালেখা | স্বামী | ক্যারিয়ারের অর্জন | বাড়ি | জীবনী এবং উল্লেখযোগ্য সিনেমায় ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্ককে জানতে অবশ্যই পড়ুন

বাংলাদেশী ব্যান্ডের আন্ডাররেটেড গান সমূহের তালিকা দেয়া হলো । নতুন কিছু গানের স্বাদ পেতে অবশ্যই পড়ুন।

পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান ২০ টি বস্তু, যা এতটাই দামী আপনি শুনে অবাক না হয়ে পারবেন না,জানতে অবশ্যই পড়ুন।