বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় সাইকেডেলিক রক ও থিওরিটিক্যাল রক ব্যান্ড মেঘদল।জানুন এই ব্যান্ড সম্পর্ককে।
বুদ্ধদেব বসুর একটা কবিতার বই ছিল আমার - "শার্ল বোদলেয়ারের কবিতা"। ঐ বইয়ের প্রিয় একটা লাইন ছিল "ভালোবাসি আশ্চর্য মেঘদল, ঐ উঁচুতে, ঐ উঁচুতে"। তার অনেকদিন পর নেট ঘেঁটে একটা গানের সন্ধান পেলাম - মুঠোফোন। ব্যান্ডের নামটাও পছন্দ হলো খুব। মেঘদল। ব্যান্ডের নাম দেখেই গানটা ডাউনলোড করে ফেললাম। তারপর থেকে টানা কয়েকদিন আমার কানে আর মনে হ্যালোজেন রোদে বসে টিকটিকিটা ভবিষ্যৎ বলে যাচ্ছিল। এই হচ্ছে মেঘদল।
ব্যান্ডঃ মেঘদল
জনরাঃ সাইকেডেলিক রক, থিওরিটিক্যাল রক
অরিজিনঃ ঢাকা, বাংলাদেশ।
সময়কালঃ ২০০২-বর্তমান
*
মুঠোফোন শোনার পরেই যেটা সবার আগে যেটা মনে হয়েছিল সেটা হচ্ছে, এমন গান তো আগে কখনো শুনি নি। অ্যাকুয়িস্টিক এলিমেন্ট, আবহ, সুর কেমন যেন প্যাকেট খোলা নতুন উপহার বাক্সের মতো আনকোরা। হাত গুটিয়ে না থেকে মামার কাছে গেলাম, আই মিন গুগল মামা। আনাচে কানাচে সব গান নিয়ে শোনা শুরু করে দিলাম। এভাবেই মেঘদলাসক্ত হয়ে গেছিলাম।
*
হিস্টোরিঃ
মেঘদলের বীজ বোনা হয়েছিল ২০০০ সালে। সেই বীজ থেকে গাছ জন্মায় ২০০২ এ, পরলৌলিক কামরা "এথেন্সে", ঠিকানাটা ৪০, গ্রাফিকাল ইকো, আজিজ সুপার মার্কেট। এখানেই মেজবাউর রহমান সুমন, শিবু কুমার শীল গিটার, খোল আর হারমোনিয়াম নিয়ে রেওয়াজ করতেন। প্রথম গান ছিল "ওম"। লিরিসিস্ট উজ্জ্বল। ধর্ম এবং ধর্মান্ধতা নিয়ে দারুণ একটা গান। সঙ্গত কারণেই গানটা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল। তবে সবকিছু পেরিয়ে ২০০৪ সালে মুক্তি পায় মেঘদলের প্রথম অ্যালবাম "দ্রোহের মন্ত্রে ভালোবাসা"। এরপর দৃশ্যপট থেকে হঠাৎ করেই উধাও মেঘদল। আবার দেখা মিলল ২০০৭ এ। জি সিরিজের লেবেলে গান এলো "নেফারতিতি"। ২০০৮ এ রিলিজ পায় মেঘদলের দ্বিতীয় এবং এখন পর্যন্ত পর্যন্ত সর্বশেষ অ্যালবাম "শহরবন্দী"। আমাকে যদি বেস্ট ১০ টা অ্যালবামের নাম বলতে বলা হয় তাহলে "শহরবন্দি" একদম প্রথম দিকেই থাকবে। কী নেই এতে? শহরবন্দি টাইটেল ট্র্যাকের নাগরিক হতাশা, চার চার চৌকো'র স্নিগ্ধতা, রোদের ফোঁটার সজীবতা, নির্বাণের আকাঙ্খা। পাথুরে দেবী গানটা কয়েকটা লাইন ডিজার্ভ করে। এই গানটা যখন প্রথম শুনি তখন "সিলিংয়ে ঝুলছে রূপবতী লাশ" লাইনটা শুনে নিজেকে সত্যিই মহাশূণ্যের মত একা মনে হচ্ছিল। পুরোপুরিভাবেই গানটায় ডুবে গেছিলাম। এরপর থেকে অপেক্ষা করছি তৃতীয় অ্যালবামের। বেশ কয়েক বছর আগেই শুনেছিলাম পরের অ্যালবাম "অ্যালুমিনিয়ামের ডানা" আসছে। সেই যে আসছে, আর আসল না। বছরখানেক আগে ইউটিউবে টিজার পেলাম একটা। একটু আশা দিয়ে আবার চলে গেল মেঘদল। অ্যালুমিনিয়ামের ডানার দেখা নেই।
*
লাইনআপঃ
মেজবাউর রহমান সুমন - লিরিক, ভোকাল, গিটার
শিবু কুমার শীল - লিরিক, ভোকাল
রাশীদ শরিফ সোয়েব - লিড গিটার
এম জি কিবরিয়া - বেজ
আমজাদ হোসেন - ড্রামস
তানভির দাউদ রনি - কী-বোর্ডস
সৌরভ - ফ্লুট
* মেঘদলের মজার একটা জিনিস হচ্ছে এর ভোকাল এবং লিরিসিস্ট দুইজন। শিবুদা এবং সুমন ভাই। শিবুদার ভোকাল টা সুরেলা, ভরাট। অন্যদিকে সুমন ভাইয়ের ভোকালটা ক্লিন, সহজ, স্নিগ্ধ। লিরিকের ক্ষেত্রেও শিবুদা যেখানে কবিতার মতো গভীর অর্থময়, কাচের টুকরার মত সুন্দর, মনে দাগ কেটে যায়।, সেখানে সুমন ভাইয়ের লিরিক সহজ, সরল, প্রাঞ্জল। দুজনের কম্বিনেশনটা দারুন। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে ফ্লুট। গানগুলোতে যেভাবে ফ্লুট ব্যবহার করা হয়েছে … সত্যিই অসাধারণ। শিবুদা আর সুমন ভাইয়ের অন্য প্রতিভাও আছে। শিবুদা বইয়েরর কভার ডিজাইন করেন, অসাধারণ হয় প্রচ্ছদগুলো। আর সুমন ভাইকে তো সবাই চিনি। আগে নাটক পরিচালনা করতেন। এখন বিজ্ঞাপন পরিচালনা করতেন। আয়নাবাজির পরিচালক অমিতাভ রেজা একবার বলেছিলেন, সুমন সিনেমা পরিচালনায় আসলে যে কারো চাইতে ভালো করবে। তার নাটকগুলো দেখে আমারও সেটাই মনে হয়েছে।
*
ডিস্কোগ্রাফিঃ
* দ্রোহের মন্ত্রে ভালোবাসা (২০০৪)
১। চেনা অচেনা
২। ছেলেবেলা
৩। শহর
৪। আকাশ মেঘে ঢাকা
৫। ক্রুসেড
৬। চতুর্দিকে
৭। জানো কি
৮। ব্যবচ্ছেদ
৯। কবিয়াল
১০। মেঘ
১১। ওম
* শহরবন্দী (২০০৯)
১। মুঠোফোন
২। ঠিক ঠাক
৩। রোদের ফোটা
৪। কুমারী
৫। শহরবন্দি
৬। চার চার চৌকো
৭। পাথুরে দেবী
৮। রঙিন ফেরেস্তা
৯। দূর পৃথিবী
১০। আবার শহর
১১। নির্বাণ
এছাড়া সোলো ট্র্যাকঃ
১। নেফারতিতি
২। এসো আমার শহরে
৩। দেয়াল
৪। জল টলমল
(শেষের সোলো ট্র্যাকগুলো কনসার্টে গাওয়া)
"কিছু বিষাদ হোক পাখি
নগরীর নোনা ধরা দেয়ালে
কাচপোকা সারি সারি
নির্বাণ নির্বাণ ডেকে যায়
Writer: প্রমিত বসাক
Comments
Post a Comment