বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড ব্ল্যাকের সর্বশেষ অ্যালবাম ঊনমানুষ এর গান গুলো নিয়ে আলোচনা।
আপনাদের কেউ যদি দাবী করে সে শুধু লিরিক বা শুধু মিউজিক কম্পোজিশানকে প্রাধান্য দিয়ে গান শোনেন, তাহলে বলবো এই অ্যালবাম আপনার জন্য নয়। কারণ, ব্ল্যাক এর গান শুনতে হলে লিরিকের পাশাপাশি কম্পোজিশান এবং ইমোশানের মিশ্রণ লক্ষ্য না করলে ব্ল্যাকের গান আপনি নিতে পারবেননা। ব্ল্যাক শুনতে হলে একই সাথে লিরিক, কম্পোজিশন আর চোখ বুঁজে ইমোশানের কম্বিনেশান বুঝতে হবে, খুঁজতে হবে।
যাই হোক, ঊনমানুষ এর কথায় আসি। "ঊনমানুষ" নামটা দিয়েছেন ব্ল্যাকের ফাউন্ডার এবং লিড গীটারিস্ট জাহান ভাই। আমার কাছে নামকরণ একটু বেশিই ভাললাগার কারণটা পার্সোনাল। "ঊনমানুষ" শব্দটা অনেক আগে আমার বিভিন্ন লেখালেখি তে ব্যবহার করেছি। তাই স্বাভাবিক ভাবে এই নামটা আমার বেশিই ভাল লেগেছে।
ঊনমানুষ এ আছে সর্বোমোট আটটি গান। যার মধ্যে "আক্ষেপ", "চোখ", "ঘৃণা", "সম্মোহন" গান চারটি লিখেছেন ব্ল্যাক এর নতুন মুখ এবং অসাধারন সাধারন বেইজিস্ট চার্লজ ভাই। অনেস্টলি স্পিকিং, এই চারটা গানের কথা শুনে আমার নতুন করে প্রয়াত যুবায়ের ইমন ভাই কে মনে পড়ে গেছে। একেবারেই ব্ল্যাকের সহজাত লিরিক। অসামান্য গভীরতা খুঁজে পেলাম লিরিকের মধ্যে।
"গহীনে", "অধরা" এবং "অনেক জীবন" গান তিনটি যুবায়ের ইমন ভাইয়ের। মানুষটা চলে গেলেও রেখে গেলেন গভীরের কিছু শব্দ যা আমাদের হারাতে দ্যায়না শ্যাওলা জগতে। মানুষটার সাথে আমার মাঝে মাঝেই চ্যাট বা ফোনে কথা হত। আমার লেখালেখির পেছনে অনেক উৎসাহ ছিলো যুবায়ের ইমন নামের সরল কিন্তু গভির মনের মানুষটার।
সর্বশেষ গান "ঊনমানুষ" গানটা লিখেছেন জাহান ভাই নিজেই। গীটারের পাশাপাশি মানুষটার লেখালেখির সত্ত্বা আলোর মুখ দেখলো ফাইনালি।
এবার একটু গানগুলো নিয়ে আমার অনুভুতি আলোচনায় আসি। আমি টেকনিক্যাল বিষয়ে অতটা পারদর্শী নই। তাই, টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ কে একটু আড়ালে রেখে অ্যালবামের গানগুলোকে নিজের মত করে ব্যাখ্যা করতে চাই।
১। আক্ষেপঃ
"কেঁদে ওঠা এক অজানা ভয়"
যেহেতু সবচাইতে পছন্দের ব্যান্ড ব্ল্যাক।তাই এই গানটা শোনার আগ পর্যন্ত ব্ল্যাকের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে একটু আশংকায় ছিলাম। আক্ষেপ এর ইন্ট্রো শুনেই মনে হল, নাহ নতুন মুখ চার্লজ ভাই ব্ল্যাকের অংশ হয়ে গেছেন পুরোপুরি। সেই সাথে টনি ভাইয়ের সেই ট্রেডমার্ক ড্রামিং গানের শুরু থেকেই তাল এনে দ্যায়। রুবায়েত ভাইয়ের প্রতি আস্থা ছিলো। তাই হাই স্কেলের শুরুটা শুনেই মনে হল, অনেকদিন পর ব্ল্যাক ইস ব্যাক।সাথে ছিলো জাহান ভাইয়ের অসাধারন সাধারন সলো।
গানটা শুনলেই মনে হয়,কোন বিরান ভূমির ভেতর দিয়ে হাঁটছি। একই সাথে অদেখা পথের টান এবং হারিয়ে যাবার ভয়ে ডুবে যাচ্ছি ধীরে ধীরে। আমার মতে, গানের কম্পোজিশান গানটা কে ব্ল্যাকের সেরা গানগুলোর লিস্টে বসানোর ক্ষমতা রাখে।
২। অধরাঃ
"সামনে অফুরন্ত পথ
তুমি আমি গন্তব্যে যাবো, বেশি দূরে নয়"
গানটা যখনি চোখ বুঁজে শুনি তখনই শীত শেষের একটা অসাধারন হেমন্তের দিন চোখে ভাসে। কারো হাতছানি টের পাই জীবনের উৎসাহে। মনে হয়, অনেক হাঁটার পর এক আকাশ নীল নদীজুড়ে গলে পড়ছে।
মনে হয়, জাহান ভাই নিজের ভেতরের অন্যরকম সুরটাকে গীটারে তুলেছেন। সাথে টনি ভাইয়ের ক্ল্যাসিক্যাল ড্রামিং। চার্লজ ভাইয়ের সিম্পল বেইজ ছিল যেখানে যতটা দরকার। রুবায়েত ভাই স্ট্যাবল ছিলেন হাই পিচ থেকে হুট করে লো পিচে।
৩। চোখঃ
"তারপর আবার ভোরের শেষে
কালো চোখের উপর সাদা ছড়াও"
চার্লজ ভাইয়ের ৪ টা লিরিকের মধ্যে এটা আমার সবচাইতে পছন্দের। শুরুথেকেই কম্পোজিশনটা কুয়াশার রাতে একটা মানুষের একাকিত্বের আকর্ষণের ভেতর টেনে নয়। জাহান ভাইয়ের সাধারন গভীর নোটগুলো হঠাৎ করেই অভিমান জমা করে। চার্লজ ভাইয়ের বেইজ আর টনি ভাইয়ের ড্রামিং ব্যাকগ্রাউন্ডে একটা গাঢ় ঝড় তোলে। রুবায়েত ভাইয়ের গায়কীর সাথে পুরো কম্পোজিশানটাই অসাধারন লেগেছে আমার কাছে।
৪। "হয়তো ক্লান্তিহীন ঘুমিয়েছি
তোমার স্বপ্নে অনেক জীবন"
আবার যুবায়ের ইমন ভাই। এই লাইন দুইটা যে আমার কি পরিমান ভাল লেগেছে তা আমি বোঝাতে পারবোনা। প্রোগ্রেসিভ রক ধরনের এই গানটার শুরু থেকেই একটা গতি সৃষ্টি করে বুকের ভেতর। শুনতে শুনতে মনে হয়, অপেক্ষা ভাল জিনিস। মনে হয়, নতুন করে অপেক্ষা করি। মনে হয়, নতুন করে হেঁটে যাই আরো দূরের পথ। এই গানে জাহান ভাই এর গীটার প্লেইং পুরাই অন্যরকম স্টাইলের মনে হয়েছে। জাহান ভাইয়ের বৃত্তের বাইরের অনেকটা। চার্লজ ভাইয়ের বেইজ ব্যাকগ্রাউন্ডে গর্জন করেছে অনবরত। সবচাইতে অসাধারন লেগেছে রুবায়েত ভাইয়ের ভয়েস। ফাটিয়ে দিয়েছে রুবায়েত ভাই।
৫। "টুকরো হয়ে গেছে আমাদের মন
আগের মত ফেরেনা কাছে"
কি এক আকর্ষনে ফিরে ফিরে যাই পুরনো এক ঘরে। শ্যাওলা ঘেটে তুলে আনি স্মৃতির ফ্রেম। অনেক বাতাস কেঁপে ওঠে জানালার পর্দায়। তোমার নাফেরায় ভিজে ওঠে বিকালের মেঘ।
কম্পোজিশান আর লিরিকের কম্বিনেশান পাগল করা। এই গানে টনি ভাইয়ের ড্রামিং পাগল করে দ্যায়। চার্লজ ভাইয়ের বেইজ আর রুবায়ের ভাই এর হাই স্কেলের ভয়েস দূরে কোথাও নিয়ে যায়। জাহান ভাই এর একটা বিষয় আমার খুব ভাল লাগে। কখনো গীটারিস্ট হিসাবে নিজেকে জাহির করেননা অপ্রয়োজনে। যখন যেখানে যতটূকু দরকার ততটুকুই দেন জাহান ভাই। প্লেলিস্টে রিপিট মোডে বাজানোর মত গান এটা।
৬। সম্মোহনঃ " কাল্পনিক শিহরণ জাগায়
অনেক ভোরের ভুল স্বপ্ন"
পাওয়ারফুল ড্রামিং আর গীটারের ইন্ট্রো শুনে আপনি দাঁতে দাঁত চেপে পা নাড়াতে বাধ্য। সাথে আছে চার্লজ ভাই এর কন্টিনিউয়াস বেইজ প্লেইং। আর রুবায়েত ভাই এর ভয়েস শুনলে মনে হয়, সে আসলে আগে থেকেই জাত গায়ক। ইচ্ছা করেই এতদিন আত্মপ্রকাশ করেনি। এই গান এমন। এইগানটা শুনতে শুনতে আরও বেশি ভাল লাগতে থাকে। জাহান ভাই এখানেও নিজের থেকে বেরিয়ে এসে গীটারে ঝড় তুলেছেন।
৭। ঘৃণাঃ "তুমি পরাজিত
নির্বাসিত তোমার অন্ধকার"।
আরেকটি রক নাম্বার। কম্পোজিশানে অনেক উঁচুনিচু আছে। এব্যাপারটা বেশ ভাল লেগেছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে মনে হয়েছে একটু তাড়াহুড়া করে গানটা শেষ করা হয়েছে। কম্পোজিশানের পেছনে আরেকটু সময় দিলে মনে হয় এলোমেলো চিন্তামগ্ন একজন মানুষের জন্য ওয়ান অব দ্য বেস্ট ট্র্যাক হতো এই গানটা।
৮। ঊনমানুষঃ "অসময় বলে কিছুই ছিলোনা
যা ঘটবে- সময়েই।"
অনেস্টলি স্পিকিং, জাহান ভাই অসাধারন লেখেন। আর কম্পোজিশানটা নিঃসন্দেহে টাইটেল ট্র্যাক হিসাবে মর্যাদা পাবার যোগ্য।
জাহান ভাইয়ের গীটার আর ইন্ট্রো কিবোর্ডের ব্যাকগ্রাউন্ড গানের শুরু থেকেই আমাকে ভোরবেলার অনেক বাতাসের মধ্যে নিয়ে যায়। বিস্তৃত কোন ল্যান্ডস্কেপ এর কোনায় দাঁড়িয়ে থাকা একজন মানুষের পুরোটা ফ্লাশব্যাক হতে পারে এই গানটা। কোরাস পার্টে জাহান ভাইয়ের গ্রাঞ্জ, টনি ভাইয়ের পরিমিত ড্রামিং স্লোমশানে কোথায় যেন নিয়ে যায়। ব্যাকগ্রাউন্ডে গভীরতা সৃষ্টি করেছে চার্লজ ভাই এর বেইজ আর কিবোর্ডের ছোট ছোট সুন্দর নোট গুলো। রুবায়েত ভাইয়ের গায়কী ছিলো পুরোপুরি আবেগময়।
মোটকথা, ঊনমানুষ অ্যলবামটা অবশ্যই ব্ল্যাক এর প্রতি ভালবাসার বাড়িয়ে তোলার মত যোগ্য অ্যালবাম বলেই আমার মনে হয়। তবে সবচাইতে খুশি হয়েছি অ্যলবামটি যুবায়ের ইমন ভাইকে উৎসর্গ করা হয়েছে দেখে। অনেকদিন পর ব্ল্যাকের পুরো অ্যালবাম রিপিট মোডে শুনতে ভালোলাগছে খুব। হারিয়ে যাচ্ছি অন্যকোথাও। হেঁটে চলেছি ঊনমানুষ হয়ে।
যাই হোক, ঊনমানুষ এর কথায় আসি। "ঊনমানুষ" নামটা দিয়েছেন ব্ল্যাকের ফাউন্ডার এবং লিড গীটারিস্ট জাহান ভাই। আমার কাছে নামকরণ একটু বেশিই ভাললাগার কারণটা পার্সোনাল। "ঊনমানুষ" শব্দটা অনেক আগে আমার বিভিন্ন লেখালেখি তে ব্যবহার করেছি। তাই স্বাভাবিক ভাবে এই নামটা আমার বেশিই ভাল লেগেছে।
ঊনমানুষ এ আছে সর্বোমোট আটটি গান। যার মধ্যে "আক্ষেপ", "চোখ", "ঘৃণা", "সম্মোহন" গান চারটি লিখেছেন ব্ল্যাক এর নতুন মুখ এবং অসাধারন সাধারন বেইজিস্ট চার্লজ ভাই। অনেস্টলি স্পিকিং, এই চারটা গানের কথা শুনে আমার নতুন করে প্রয়াত যুবায়ের ইমন ভাই কে মনে পড়ে গেছে। একেবারেই ব্ল্যাকের সহজাত লিরিক। অসামান্য গভীরতা খুঁজে পেলাম লিরিকের মধ্যে।
"গহীনে", "অধরা" এবং "অনেক জীবন" গান তিনটি যুবায়ের ইমন ভাইয়ের। মানুষটা চলে গেলেও রেখে গেলেন গভীরের কিছু শব্দ যা আমাদের হারাতে দ্যায়না শ্যাওলা জগতে। মানুষটার সাথে আমার মাঝে মাঝেই চ্যাট বা ফোনে কথা হত। আমার লেখালেখির পেছনে অনেক উৎসাহ ছিলো যুবায়ের ইমন নামের সরল কিন্তু গভির মনের মানুষটার।
সর্বশেষ গান "ঊনমানুষ" গানটা লিখেছেন জাহান ভাই নিজেই। গীটারের পাশাপাশি মানুষটার লেখালেখির সত্ত্বা আলোর মুখ দেখলো ফাইনালি।
এবার একটু গানগুলো নিয়ে আমার অনুভুতি আলোচনায় আসি। আমি টেকনিক্যাল বিষয়ে অতটা পারদর্শী নই। তাই, টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ কে একটু আড়ালে রেখে অ্যালবামের গানগুলোকে নিজের মত করে ব্যাখ্যা করতে চাই।
১। আক্ষেপঃ
"কেঁদে ওঠা এক অজানা ভয়"
যেহেতু সবচাইতে পছন্দের ব্যান্ড ব্ল্যাক।তাই এই গানটা শোনার আগ পর্যন্ত ব্ল্যাকের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে একটু আশংকায় ছিলাম। আক্ষেপ এর ইন্ট্রো শুনেই মনে হল, নাহ নতুন মুখ চার্লজ ভাই ব্ল্যাকের অংশ হয়ে গেছেন পুরোপুরি। সেই সাথে টনি ভাইয়ের সেই ট্রেডমার্ক ড্রামিং গানের শুরু থেকেই তাল এনে দ্যায়। রুবায়েত ভাইয়ের প্রতি আস্থা ছিলো। তাই হাই স্কেলের শুরুটা শুনেই মনে হল, অনেকদিন পর ব্ল্যাক ইস ব্যাক।সাথে ছিলো জাহান ভাইয়ের অসাধারন সাধারন সলো।
গানটা শুনলেই মনে হয়,কোন বিরান ভূমির ভেতর দিয়ে হাঁটছি। একই সাথে অদেখা পথের টান এবং হারিয়ে যাবার ভয়ে ডুবে যাচ্ছি ধীরে ধীরে। আমার মতে, গানের কম্পোজিশান গানটা কে ব্ল্যাকের সেরা গানগুলোর লিস্টে বসানোর ক্ষমতা রাখে।
২। অধরাঃ
"সামনে অফুরন্ত পথ
তুমি আমি গন্তব্যে যাবো, বেশি দূরে নয়"
গানটা যখনি চোখ বুঁজে শুনি তখনই শীত শেষের একটা অসাধারন হেমন্তের দিন চোখে ভাসে। কারো হাতছানি টের পাই জীবনের উৎসাহে। মনে হয়, অনেক হাঁটার পর এক আকাশ নীল নদীজুড়ে গলে পড়ছে।
মনে হয়, জাহান ভাই নিজের ভেতরের অন্যরকম সুরটাকে গীটারে তুলেছেন। সাথে টনি ভাইয়ের ক্ল্যাসিক্যাল ড্রামিং। চার্লজ ভাইয়ের সিম্পল বেইজ ছিল যেখানে যতটা দরকার। রুবায়েত ভাই স্ট্যাবল ছিলেন হাই পিচ থেকে হুট করে লো পিচে।
৩। চোখঃ
"তারপর আবার ভোরের শেষে
কালো চোখের উপর সাদা ছড়াও"
চার্লজ ভাইয়ের ৪ টা লিরিকের মধ্যে এটা আমার সবচাইতে পছন্দের। শুরুথেকেই কম্পোজিশনটা কুয়াশার রাতে একটা মানুষের একাকিত্বের আকর্ষণের ভেতর টেনে নয়। জাহান ভাইয়ের সাধারন গভীর নোটগুলো হঠাৎ করেই অভিমান জমা করে। চার্লজ ভাইয়ের বেইজ আর টনি ভাইয়ের ড্রামিং ব্যাকগ্রাউন্ডে একটা গাঢ় ঝড় তোলে। রুবায়েত ভাইয়ের গায়কীর সাথে পুরো কম্পোজিশানটাই অসাধারন লেগেছে আমার কাছে।
৪। "হয়তো ক্লান্তিহীন ঘুমিয়েছি
তোমার স্বপ্নে অনেক জীবন"
আবার যুবায়ের ইমন ভাই। এই লাইন দুইটা যে আমার কি পরিমান ভাল লেগেছে তা আমি বোঝাতে পারবোনা। প্রোগ্রেসিভ রক ধরনের এই গানটার শুরু থেকেই একটা গতি সৃষ্টি করে বুকের ভেতর। শুনতে শুনতে মনে হয়, অপেক্ষা ভাল জিনিস। মনে হয়, নতুন করে অপেক্ষা করি। মনে হয়, নতুন করে হেঁটে যাই আরো দূরের পথ। এই গানে জাহান ভাই এর গীটার প্লেইং পুরাই অন্যরকম স্টাইলের মনে হয়েছে। জাহান ভাইয়ের বৃত্তের বাইরের অনেকটা। চার্লজ ভাইয়ের বেইজ ব্যাকগ্রাউন্ডে গর্জন করেছে অনবরত। সবচাইতে অসাধারন লেগেছে রুবায়েত ভাইয়ের ভয়েস। ফাটিয়ে দিয়েছে রুবায়েত ভাই।
৫। "টুকরো হয়ে গেছে আমাদের মন
আগের মত ফেরেনা কাছে"
কি এক আকর্ষনে ফিরে ফিরে যাই পুরনো এক ঘরে। শ্যাওলা ঘেটে তুলে আনি স্মৃতির ফ্রেম। অনেক বাতাস কেঁপে ওঠে জানালার পর্দায়। তোমার নাফেরায় ভিজে ওঠে বিকালের মেঘ।
কম্পোজিশান আর লিরিকের কম্বিনেশান পাগল করা। এই গানে টনি ভাইয়ের ড্রামিং পাগল করে দ্যায়। চার্লজ ভাইয়ের বেইজ আর রুবায়ের ভাই এর হাই স্কেলের ভয়েস দূরে কোথাও নিয়ে যায়। জাহান ভাই এর একটা বিষয় আমার খুব ভাল লাগে। কখনো গীটারিস্ট হিসাবে নিজেকে জাহির করেননা অপ্রয়োজনে। যখন যেখানে যতটূকু দরকার ততটুকুই দেন জাহান ভাই। প্লেলিস্টে রিপিট মোডে বাজানোর মত গান এটা।
৬। সম্মোহনঃ " কাল্পনিক শিহরণ জাগায়
অনেক ভোরের ভুল স্বপ্ন"
পাওয়ারফুল ড্রামিং আর গীটারের ইন্ট্রো শুনে আপনি দাঁতে দাঁত চেপে পা নাড়াতে বাধ্য। সাথে আছে চার্লজ ভাই এর কন্টিনিউয়াস বেইজ প্লেইং। আর রুবায়েত ভাই এর ভয়েস শুনলে মনে হয়, সে আসলে আগে থেকেই জাত গায়ক। ইচ্ছা করেই এতদিন আত্মপ্রকাশ করেনি। এই গান এমন। এইগানটা শুনতে শুনতে আরও বেশি ভাল লাগতে থাকে। জাহান ভাই এখানেও নিজের থেকে বেরিয়ে এসে গীটারে ঝড় তুলেছেন।
৭। ঘৃণাঃ "তুমি পরাজিত
নির্বাসিত তোমার অন্ধকার"।
আরেকটি রক নাম্বার। কম্পোজিশানে অনেক উঁচুনিচু আছে। এব্যাপারটা বেশ ভাল লেগেছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে মনে হয়েছে একটু তাড়াহুড়া করে গানটা শেষ করা হয়েছে। কম্পোজিশানের পেছনে আরেকটু সময় দিলে মনে হয় এলোমেলো চিন্তামগ্ন একজন মানুষের জন্য ওয়ান অব দ্য বেস্ট ট্র্যাক হতো এই গানটা।
৮। ঊনমানুষঃ "অসময় বলে কিছুই ছিলোনা
যা ঘটবে- সময়েই।"
অনেস্টলি স্পিকিং, জাহান ভাই অসাধারন লেখেন। আর কম্পোজিশানটা নিঃসন্দেহে টাইটেল ট্র্যাক হিসাবে মর্যাদা পাবার যোগ্য।
জাহান ভাইয়ের গীটার আর ইন্ট্রো কিবোর্ডের ব্যাকগ্রাউন্ড গানের শুরু থেকেই আমাকে ভোরবেলার অনেক বাতাসের মধ্যে নিয়ে যায়। বিস্তৃত কোন ল্যান্ডস্কেপ এর কোনায় দাঁড়িয়ে থাকা একজন মানুষের পুরোটা ফ্লাশব্যাক হতে পারে এই গানটা। কোরাস পার্টে জাহান ভাইয়ের গ্রাঞ্জ, টনি ভাইয়ের পরিমিত ড্রামিং স্লোমশানে কোথায় যেন নিয়ে যায়। ব্যাকগ্রাউন্ডে গভীরতা সৃষ্টি করেছে চার্লজ ভাই এর বেইজ আর কিবোর্ডের ছোট ছোট সুন্দর নোট গুলো। রুবায়েত ভাইয়ের গায়কী ছিলো পুরোপুরি আবেগময়।
মোটকথা, ঊনমানুষ অ্যলবামটা অবশ্যই ব্ল্যাক এর প্রতি ভালবাসার বাড়িয়ে তোলার মত যোগ্য অ্যালবাম বলেই আমার মনে হয়। তবে সবচাইতে খুশি হয়েছি অ্যলবামটি যুবায়ের ইমন ভাইকে উৎসর্গ করা হয়েছে দেখে। অনেকদিন পর ব্ল্যাকের পুরো অ্যালবাম রিপিট মোডে শুনতে ভালোলাগছে খুব। হারিয়ে যাচ্ছি অন্যকোথাও। হেঁটে চলেছি ঊনমানুষ হয়ে।
Comments
Post a Comment