গ্যারিঞ্চা ফুটবল ইতিহাসের এক অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারের নাম।যাকে বাঁকানো পায়ের জাদুকরও বলা হয় ।

গ্যারিঞ্চা ফুটবল ইতিহাসের এক অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারের নাম। গ্যারিঞ্চা শব্দটির অর্থ ছোট পাখি। ছোটখাটো গড়নের মানুষ হওয়ায় ম্যানুয়েল ফ্রান্সিসকো দস্ সান্তোস নামের ছোট ভাইটিকে বড় বোন রোসা আদর করে ডাকতেন ছোট্ট পাখি। সেই থেকেই তিনি গ্যারিঞ্চা। জন্ম থেকেই তার এক পা আরেক পা থেকে ৬ সেন্টিমিটার ছোট এবং বাঁকা ছিল। তিনি তার এ শারীরিক প্রতিবন্ধীতাকে জয় করে নিয়েছিলেন।
 

গারিঞ্চাকে বলা হয়ে থাকে ফুটবল ইতিহাসের সেরা ড্রিবলার। উইঙ্গার পজিশনটিকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করা গারিঞ্চা ফিফার শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড়ের তালিকায় সপ্তম এবং বিংশ শতাব্দীর ‘ওয়ার্ল্ড ড্রিম টিম’ এর সদস্য নির্বাচিত হন। গ্যারিঞ্চা পেলের থেকে সাত বছরের বড় ছিলেন এবং সে সময়ে ছিলেন পেলের চেয়েও অনেক বেশি জনপ্রিয়।

 তিনি তার বাঁকানো পায়ের জাদুকরী খেলার জন্য পেয়েছিলেন ‘অ্যাঞ্জেল উইথ দ্য বেন্ট লেগস’ উপাধি। বিখ্যাত ‘ব্যানানা শট’ দিয়ে কর্নার থেকেও সরাসরি গোল করার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন গারিঞ্চা। ছোট- বড় পায়ের ড্রিবলিং ১৯৫৮ এবং ১৯৬২ পর পর দুটি বিশ্বকাপ জয় করেন গারিঞ্চা। ১৯৩৪ ও ১৯৩৮ এর ইতালির পর দ্বিতীয় দল হিসেবে গারিঞ্চার ব্রাজিল জয় করে টানা দুটি বিশ্বকাপ। 

১৯৬২ সালের চিলি বিশ্বকাপে প্রথম দিকেই পেলে আহত হয়ে প্রতিযোগিতায় আর খেলতে পারেননি। গ্যারিঞ্চাই সে প্রতিযোগিতায় অসাধারণ খেলে সে বছরে ব্রাজিলের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। চেকোস্লোভাকিয়ার বিপক্ষে ফাইনালে প্রচণ্ড জ্বর নিয়েও খেলা চালিয়ে যান গারিঞ্চা। 

ব্রাজিলকে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন। বিশ্বকাপ শিরোপার পাশাপাশি জিতে নেন আসরের সেরা খেলোয়াড়ের গোল্ডেন বল এবং সর্বোচ্চ গোলদাতার গোল্ডেন বুটও। কেউ কেউ মনে করেন, অসাধারণ ড্রিবলিং, দুরন্ত গতি, দুই পায়ের সমান দক্ষতা, জোরালো শট সব মিলিয়ে পেলের চেয়ে অনেক বেশি ক্যারিশম্যাটিক ছিলেন গারিঞ্চা।

 গ্যারিঞ্চা এবং পেলে দুজনই খেলেছেন এমন কোন খেলায় ব্রাজিল কখনও পরাজিত হয় নি। ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপ অভিষেক ম্যাচের এক মিনিটের কম সময়ের মধ্যেই গারিঞ্চা বিপক্ষ দলের তিনজন খেলোয়াড় কাটিয়ে যে শটটি নেন তা পোস্টে লেগে ফিরে আসে। এক মুহূর্ত পরেই গারিঞ্চার বাড়িয়ে দেওয়া বল থেকে পেলের দুর্দান্ত শটটিও ফিরে আসে ক্রসবারে লেগে। 

গারিঞ্চা এর পরও একের পর এক ব্যতিব্যস্ত করে তোলেন বিপক্ষের রক্ষণ। গারিঞ্চার অভিষেক ম্যাচের প্রথম তিন মিনিটকে বলা হয়ে থাকে ‘দি গ্রেটেস্ট থ্রি মিনিটস ইন ফুটবল হিস্ট্রি’। ১৯৬৬-তে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপেও খেলতে গিয়েছিলেন গ্যারিঞ্চা। গোড়ালির ইনজুরিতে ভুগতে থাকা গারিঞ্চা তবুও প্রথম দুটি ম্যাচে খেলেন। বুলগেরিয়ার সঙ্গে ২-০ গোলে জেতা ম্যাচটিতে একটি গোলও করেন একটি। 

কিন্তু পরের ম্যাচেই বিতর্কিত রেফারিংয়ের কারণে হাঙ্গেরির সঙ্গে ব্রাজিল ৩-১ গোলে হেরে যায়। বিশ্বকাপ ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্য আসর ছিল ১৯৬৬ সাল। সে বারে ইংল্যান্ডকে জয়ী করাবার জন্য রেফারিংয়ের ক্ষেত্রে নেওয়া হয়েছিল দিনকে রাত করার ঘৃণিত মিশন। ব্রাজিল ও পেলে হটাও ছিল ইউরোপিয়ানদের মূল সূর। 

সেই জঘন্য রেফারিংয়ের স্বীকার হয়েই ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপে হাঙ্গেরির সাথে ৩-১ গোলে হেরে যায় ব্রাজিল। ঐ ম্যাচটিই গারিঞ্চার জীবনের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। গ্যারিঞ্চা ব্রাজিলের হয়ে ৫০ টি ম্যাচ খেলেছেন এবং শেষ ম্যাচ ছাড়া বাকী ৪৯টিতে জয় পেয়েছেন। হারার পরে গ্যারিঞ্চা বলেছিলেন, আজ ব্রাজিলের বিরুদ্ধে ঈশ্বর নিজেই ফুটবল খেলেছেন, নইলে ব্রাজিল হারতে পারে না। ঈশ্বরের বিরুদ্ধে তো আর খেলা যায় না। তিনি খেলা ছেড়ে দেন। ২৮ শে অক্টোবর ১৯৩৩ সালে জন্ম নেওয়া এই অসাধারণ ফুটবলার ২০শে জানুয়ারি ১৯৮৩ সালে মাত্র ৪৯ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

Comments

Popular posts from this blog

শাবনূরের লাইফস্টাইল অজানা অনেক তথ্য I আসল নাম | উচ্চতা I ওজন I শারীরিক পরিমাপ | বয়স | পড়ালেখা | স্বামী | ক্যারিয়ারের অর্জন | বাড়ি | জীবনী এবং উল্লেখযোগ্য সিনেমায় ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্ককে জানতে অবশ্যই পড়ুন

বাংলাদেশী ব্যান্ডের আন্ডাররেটেড গান সমূহের তালিকা দেয়া হলো । নতুন কিছু গানের স্বাদ পেতে অবশ্যই পড়ুন।

আরিফিন শুভর লাইফস্টাইল অজানা সকল তথ্য ব্যক্তিগত জীবন I আসল নাম | উচ্চতা | বয়স | পড়ালেখা | স্ত্রী | ক্যারিয়ারের অর্জন | বাড়ি | জীবনী এবং কত গুলো সিনেমায় কাজ করেছেন জানতে পড়ুন