আজকের ফুটবল দুনিয়ায় আলোচিত কৌশল ফলস নাইনের নৈপথ্যে

আজকের ফুটবল দুনিয়ায় আলোচিত কৌশল ‘ফলস নাইন’ যে পেপ গার্দিওলারই আবিষ্কার, সেটা জানা গেল এত বছর পরে। বার্সেলোনার কোচ থাকাকালীন গার্দিওলার এই কীর্তি রাতারাতি বদলে দিয়েছে ফুটবলের গতানুগতিক ধারণাকে। এত দিন ফলস নাইন নিয়ে প্রচুর কথা হলেও এ ব্যাপারে ‘স্পিকটি নট’ ছিলেন সাবেক এই কাতালান কোচ। প্রথম ব্যবহৃত হওয়ার এত বছর পরে এই কৌশল এখন ফুটবলের অবিচ্ছেদ্য ও অন্যতম জনপ্রিয় কৌশলই। কীভাবে ‘ফলস নাইন’ ধারণার প্রবর্তন করেছিলেন গার্দিওলা? জানা যায়, ২০০৯ সালে ন্যু ক্যাম্পে এক ‘এল ক্লাসিকো’ই প্রথম দেখেছিল ফুটবলের দিগদর্শন বদলে দেওয়া এই কৌশল। ধারণাটি প্রবর্তনের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত রিয়াল রক্ষণভাগের দুই তারকা ফ্যাবিও ক্যানাভারো ও ক্রিস্টোফ মেৎজেলদাবা কড়া মার্কিয়ে রেখেছিলেন তারকা লিওনেল মেসিকে। সেই ম্যাচে আক্রমণভাগের মুখে খেলছিলেন স্যামুয়েল ইতো আর মেসি খেলছিলেন ডানদিকে। খেলার একপর্যায়ে গার্দিওলা হাতের ইশারায় মেসিকে নিয়ে আসেন মাঝখানে, আর ইতোকে নিয়ে যান ডান দিকে। পুরো ব্যাপারটিই দারুণ কার্যকর প্রমাণিত হয়, কারণ ওই ইশারা আগ পর্যন্ত মেসি ও ইতোকে দেওয়া পাহাড়া হঠাৎ করেই গুলিয়ে ফেলেন ক্যানাভারো ও মেৎজেলদাবা। তাঁরা এই হঠাৎ বদলটি একেবারেই ধরতে পারেননি। ফলস নাইনের মাধ্যমে সেদিন যে সুবিধাটা বার্সেলোনা পেয়েছিল, সেটা এই জায়গায় প্রণিধানযোগ্য। মেসিকে নিচে নামিয়ে আক্রমণের কেন্দ্রীয় ভূমিকায় নিয়ে আসার কারণে তিনি পেয়েছিলেন নিজেকে মেলে ধরার অবারিত সুযোগ। গতানুগতিক ছকে ‘ফলস নাইন’কে ঠেকাতে ওই সময়ই শুধু নয়, পরের দু-তিনটি মৌসুমেও প্রতিপক্ষ দলগুলোকে বেগ পেয়ে হয়েছে যথেষ্টই। ২০১০ সালের বিশ্বকাপে গার্দিওলার এই কৌশল স্পেন দলে ব্যবহার করেছিলেন কোচ ভিসেন্তে দেল বস্ক। দুর্ভাগ্যক্রমে স্প্যানিশ দলে মেসি না থাকায় ফলস নাইন করা হয়েছিল সেস ফ্যাব্রিগাসকে। ফ্যাব্রিগাস এই নতুন ভূমিকায় হতাশ করেননি দেল বস্ককে। ফলস নাইনের জন্ম কি গার্দিওলার একটি নির্দিষ্ট মুহূর্তের ভাবনা ছিল? মোটেই নয়। এ ধারণাটি প্রবর্তনের আগে অনেক দিন ভেবেছেন তিনি। তিনি দেখেছেন, মেসি মাঠে নামলেই প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডাররা তাঁকে মার্ক করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তিনি চিন্তা করলেন, হঠাৎ করেই যদি মেসির জায়গাটি একটু নিচের দিকে নামিয়ে আক্রমণ শুরু করা যায় তাহলে কেমন হয়? তিনি ফলস নাইন-সংক্রান্ত নিজের ভাবনাটি বার্সার এক টিম মিটিংয়ে প্রকাশ করেছিলেন ২০০৯ সালের এল ক্লাসিকোর আগের দিন। পরে মেসিকে নিজের রুমে ডেকে নিয়ে আলাদাভাবেই ধারণাটি ব্যাখ্যা করেছিলেন তিনি।ফলস নাইনের আরও একটা দিক গার্দিওলা ভেবেছিলেন একেবারে নিখুঁতভাবেই। মেসিকে ফলস নাইন বানিয়ে নিচে নামিয়ে আনলে প্রতিপক্ষের ক্ষেত্রে কী কী ঘটবে, সেটাও ছবির মতো করেই সাজিয়েছিলেন গার্দিওলা। তাঁর ভাবনাটা ছিল অনেকটা এমন, ‘যদি মেসিকে নিচে নামিয়ে ইতো বা অন্য দুই ফরোয়ার্ডকে দুই পাশে দিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে মেসি ম্যান মার্কিং থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে চলতে পারবেন। প্রতিপক্ষের ফুলব্যাকরা তখন বার্সেলোনার উইঙ্গারদের নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। ফলস নাইনকে তাঁরা ধরবে না এই কারণে, যে তাতে নিজেদের রক্ষণমুখ উন্মুক্ত হয়ে পড়ার শঙ্কা থাকবে। গার্দিওলার এই ভাবনাটি কী ধরনের কার্যকর ভূমিকা রেখেছিল, সেটা প্রমাণিত হয়েছে পরবর্তী সময়ে বেশ ভালোভাবেই।’ পেপ গার্দিওলা বার্সালোনাতে কোচ হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর আধুনিক ফুটবলের অনেক কিছুই পরিবর্তন করেছেন। তবে সবচেয়ে সফল ছিলেন মেসিকে রাইট উইং থেকে সেন্টারে এনে এই ফলস নাইন পজিশনে খেলিয়ে। তারপর ইন্টারন্যাশনাল লেভেল অনেক দেশও চিরাচরিত স্ট্রাইকার ছাড়া খেলতে শুরু করলো। সবচেয়ে বড় উদাহারন হচ্ছে দেল বক্স স্পেনকে ২০১২ সালের ইউরো ফাইনালে ফেব্রেগাসকে ফলস নাইন পজিশনে রেখে কোনপ্রকার ট্রেডিশনাল নাম্বার নাইন ছাড়াই ইতালিকে ৪-০ গোলে হারিয়েসিলো। পেপ গারদিওলার মাধ্যমে বেশিরভাগ ফুটবল ফ্যান ফলস নাইন পজিশনের সাথে পরিচিত হলেও এই পজিশনের উৎপত্তি আরো অনেক আগে। ১৯৩০ সালের দিকে অস্ট্রিয়ান ন্যাশনাল টিম পরিচিত ছিলো ওয়ান্ডারটিম নামে। অই টিমের অন্যতম সদস্য সেন্টার ফরোয়ারড ম্যাথিয়াস সিনডেলার এই ফলস নাইন রোল সফলতার সহীত প্লে করেসিলো। তারপর ১৯৫০ সালের মাইটি ম্যাগায়ারস নামের সেই গ্রেটেস্ট হাংগেরিয়ান টিমের সদস্য হিদকুটে ডিপ লায়িং ফরোয়াড হিসেবে খেলতো। কিন্ত মডার্ন ফুটবলে লুসিয়ানো স্পেলেত্তি এর হাত ধরেই ফলস নাইন আবার ফিরে আসে, রোমাতে টট্টিকে এই ফলস নাইন হিসেবে ব্যাবহার করেসিলেন ২০০৬-০৭ সিজনে। বর্তমানে লিভারপুলে ফিরিমিনো এবং আর্সেনালে সাঞ্চেজ বেশ ভালো পারফর্ম করসে ফলস নাইন হিসেবে। . ফলস নাইন পজিশনটা কি? টিপিকাল নাম্বার নাইন হচ্ছে স্ট্রাইকার বা ফরোয়াড, এইটা বলতেসি কারন ফলস নাইন যে কেও হইতে পারে যেমন এটাকিং মিডফিল্ডার, উইংগার অথবা যে কেও যার ফলস নাইনে খেলার মত ট্যাকনিকাল এবিলিটি আছে। ক্লাসিক পোচার এবং ক্লিনিকাল ফিনিশার যেমন রোনালদো ডি লিমা, ইব্রাহিমোভিচ, রুড ভন নিলস্টরয় এদের পজিশন ফিক্সড করা থাকে ফাইনাল এটাকিং থার্ড সেন্টারে যেটা ডিফেন্স লাইনের কাছাকাছি। ম্যান মারকিং অথবা জোনাল মারকিং দুভাবেই টিপিক্যাল নাম্বার নাইনকে মার্ক করা সহজ কারন এরা ডিফেন্স লাইনের খুব কাছাকাছি থাকে। মূলত ডিফেন্স লাইনে স্পেস ক্রিয়েট করার জন্যই এই ফলস নাইন পজিশনের উৎপত্তি। যেসব টিম ফলস নাইন ট্যাক্টিক ইউজ করে খেলে তারা সাধারনত কোন টার্গেট ম্যান ছাড়াই খেলে সোজাসুজি বলতে টিমের কোন ফোকাল পয়েন্ট থাকেনা। ফলস নাইন পজিশনটা হচ্ছে এটাকিং মিড থেকে একটু সামনে আবার ফাইনাল থার্ডের একটু নিচে। এই প্লেয়ারের কাছ হচ্ছে নিচে নেমে বল রিসিভ করা এবং টিমের বিল্ডাপে অংশগ্রহন করা। বল রিসিভ করার জন্য যখন নিচে নামে তখন সেন্টার ডিফেন্ডাররা দন্ধে পরে যায় তাদের কি করা উচিত? পার্টনারের সাথে থেকে ডিফেন্স লাইন বজায় রাখা নাকি ফলস নাইনকে মার্ক করার জন্য উপরে উঠে যাওয়া? আর এই সুযোগটাই কাজে লাগায় টিমের অন্য ইনভারটেড ওইংগারসরা এবং মিডফিল্ডার যারা লেট রান করে বক্সে। . ফলস নাইন টার্মটা কিভাবে আসলো ? আগের দিনে এখনকার মত পজিশনভিত্তিক জারসি নাম্বার ছিলোনা তখন স্ট্রাইকাররা সাধারণত ৯ নাম্বার জারসি পড়ে খেলতো। তো যখন দেখা গেলো ৯ নাম্বার জার্সি পরিহিত প্লেয়ার তার ন্যাচারাল পজিশনে খেলতেসেনা তার মানে সে ট্রু নাম্বার নাইন নয় । সেখান থেকেই এটি ফলস নাইন নামে পরিচিতি পায়। . ফলস নাইনকে থামানোর উপায় কি? সাধারনত ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে ডিফেন্স লাইন একটু ডীপে নামিয়ে দুইজন ভালো ডাবল পিভোট (DM) খেলিয়ে ফলস নাইনকে অকার্যকর করা যায়। অন্য কথায় বললে বাস পার্ক করে আর কি। চেলসি এবং মরিনহোর ইন্টার এই ফর্মেশনে খেলে বার্সাকে আটকাতে পেরেছিলো। চেলসির বিপক্ষে মেসি এখনো কোন গোল করতে পারেনি। আরেকটা সিস্টেম হচ্ছে একজন সিভিকে ফ্রিডম দেয়া যে ফলস নাইনকে ফলো করতে পারবে আর ডিফেন্সের বাকি ৩ জন ডিফেন্স লাইন বজায় রাখবে।

Comments

Popular posts from this blog

শাবনূরের লাইফস্টাইল অজানা অনেক তথ্য I আসল নাম | উচ্চতা I ওজন I শারীরিক পরিমাপ | বয়স | পড়ালেখা | স্বামী | ক্যারিয়ারের অর্জন | বাড়ি | জীবনী এবং উল্লেখযোগ্য সিনেমায় ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্ককে জানতে অবশ্যই পড়ুন

বাংলাদেশী ব্যান্ডের আন্ডাররেটেড গান সমূহের তালিকা দেয়া হলো । নতুন কিছু গানের স্বাদ পেতে অবশ্যই পড়ুন।

পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান ২০ টি বস্তু, যা এতটাই দামী আপনি শুনে অবাক না হয়ে পারবেন না,জানতে অবশ্যই পড়ুন।