বলছি বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় এবং মেটালস্ট্রিমের সবচেয়ে শক্তিশালী হেভি মেটাল ব্যান্ড ক্রিপটিক ফেটের কথা।
"সময় নেই আর ফিরে তাকাবার
লোভেরই আগুন পুড়িয়েছে আমায়
অন্যায়ের বাঁধনে ঘেরা আমি অসহায়
লোভেরই আগুন আজ এনেছে কোথায়"
আজ কথা বলবো বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় এবং মেটালস্ট্রিমের সবচেয়ে শক্তিশালী হেভি মেটাল ব্যান্ড ক্রিপটিক ফেটের কথা। এই শক্তিশালী হেভি মেটাল ব্যান্ডটি যাত্রা শুরু করে যখন, তখন চারিদিকে চলছে ফিলিংস, রক্সট্রাটা, ওয়ারফেজ, ওয়েভসদের জয়জয়কার। তখন তুমুল জনপ্রিয়তায় রয়েছিল এই ব্যান্ড গুলো। ওয়াহিদ এবং সারফারাজ নামের দুই স্কুল বালক হটাৎ করেই চিন্তা করলো আমরা নিজেরাই যদি একটা ব্যান্ড করি কেমন হয়।আর তাদের যেমন কথা ঠিক তেমনি কথা মতো ব্যান্ড তৈরির কাজে লেগে পড়লো তারা। তখন তারা তাদের এই পরিকল্পনার কথা জানালো তাদের স্কুলের অন্য তিন বন্ধু সাকিব ফারশিদ এবং ইরেশকে।তাদের জানানোর পর তারা ও খুব আনন্দের সাথেই তাদের পরিকল্পনার মতো কাজ করতে রাজি হয়ে গেলো। আর এই খানে থেকেই গঠিত হয়ে গেলো জনপ্রিয় এই ব্যান্ডটি। আর এই সময় তা ছিল ১৯৯৩ সাল। তখন ব্যান্ডের বেজ গিটারিস্ট ছিল সাকিব ,ড্রামার ছিল ফারশিদ এবং ভোকাল ছিল ইরেশ। তখন তারা চিন্তা করলো ব্যান্ড তো তৈরী হয়ে গেলো কিন্তু ব্যান্ডের কি নাম দিবে তারা। তখন তাদের ব্যান্ডের বেজ গিটারিস্ট সাকিব এগিয়ে এসে নাম দিলো ক্রিপটিক ফেইট।সব থেকে মজার ব্যাপারটা হলো নামটি সাকিব তারাবীর নামায পড়ার সময় হটাৎ চিন্তায় খুঁজে পেয়েছিলেন। ব্যান্ড তৈরির জন্য যা যা দরকার ছিল সবই তো হলো। কিন্তু এখন তো ব্যান্ডের জন্য প্রয়োজন গান।যে কোনো শো তে পারফরম্যান্সের জন্য প্রয়োজন গান কিন্তু তখন লাইভ কন্সার্টের সুযোগ কম থাকায় তাদের মনের মধ্যে একটা হতাশা নেমে এলো। তাদের প্রথম গান একক গান ছিল' ক্যাপ্টারস অফ ফেট ' ('Captors of Fate' ) তাদের প্রথম গানটি লিখেছিলো ফারশিদ এবং সেই গানের নামটি ও দিয়েছিলো। তাদের প্রথম গানের ডেমোটি ও তৈরী হয়েছিল ফারশিদ এর থাকার রুমে।কিন্তু শ্রোতাদের কাছে এই গানটি তেমন কোনো সাড়া পায়না। তারপর কিছু দিন যেতেই ফারশিদ ব্যান্ডটি ছেড়ে আমেরিকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলে আর ফারশিদ চলে যাবার পর ব্যান্ডটি ও বন্ধ হয়ে গেলো। তবে ফারশিদ যাবার সময় তার বন্ধুদের কথা দিয়ে গিয়েছিলো যে সে খুব দ্রুতই ফিরে আসবে এবং নতুন অ্যালবাম নিয়ে কাজ শুরু করবে।
ক্রিপটিক ফেট এর বর্তমান মেম্বার
আর তারপর ফারশিদ তা কথা মতো গ্রীষ্মের ছুটিতে দেশে ফিরে আসে এবং ব্যান্ডের জন্য প্রথম অ্যালবাম এর কাজ শুরু করে দেয়। তাদের প্রথম অ্যালবাম এর ৮ টি গান এক মাসের মধ্যেই সম্পন্ন হয়ে যায়।তারপর অ্যালবাম এর রেকর্ডিং এবং মাস্টারিং করে সাউন্ডগার্ডেন স্টুডিওতে তাদের এই কাজ গুলো ও খুব দ্রুত হয়ে যায়। আর যার ফলে তাদের প্রথম অ্যালবাম তৈরী হয়ে যায়। এই ব্যান্ডের প্রথম অ্যালবাম এ ড্রামার ফারশিদ গীটারে ওয়াহিদ এবং সারফারাজ আর ভোকালে শাকিব তারা মিলেই অ্যালবাম এর কাজ শেষ করে।তাদের প্রথম অ্যালবাম এর নাম ছিল 'Ends are forever' (ইন্ডস আর ফরএভার) ।তাদের অ্যালবাম টি রিলিজ হয় ১৯৯৩ সালে দিকে। তখন তাদের এই অ্যালবাম টি ইংলিশ মেটাল ভক্তদের মনে অভূতপূর্ব সাফল্য লাভ করে। তারপর ফারশিদ আবার আমেরিকা চলে আসে।
আর এরমধ্যেই শাকিব এবং সারফারাজের সাথে পরিচয় হয় ফারহানের।১৯৯৭ সালে ক্রিপটিক ফেট ব্যান্ডটি তাদের প্রথম লাইভ শোতে পারফর্মেন্স করে। সেই শোতে তারা খুব ভালো সাপোর্ট পায়। আর তখনি তারা ঠিক করে তাদের পরবর্তী অ্যালবাম এর কাজের জন্য।আর তার কিছু দিন পর শুরু করে তাদের প্রথম বাংলা অ্যালবাম এর কাজ। তাদের অ্যালবাম এর কাজ ও খুব দ্রুত সম্পূর্ন্ন হয়ে যায় কিন্তু কোনো রেকর্ডিং কোম্পানি তাদের এই অ্যালবাম টি নিতে চায় না। আর এর মধ্যে তাদের নতুন অ্যালবাম এর কিছু গান আগেই বাহির হয়ে যায় শ্রোতাদের মধ্যে এবং অ্যালবাম এর সেই গান গুলো অভাবনীয় সাড়া পায়।আর তার ফলে ক্রিপটিক ফেট ও আরো ভালো জনপ্রিয়তা পেতে থাকে। তারপর ব্যান্ডের অন্যতম গিটারিস্ট ওয়াহিদ ব্যান্ড ত্যাগ করে চলে যায়।আর তখন ক্রিপটিক ফেট এর প্রয়োজন সেই জায়গায় আর একজন গিটারিস্ট।তখন ক্রিপটিক ফেট এই ব্যাপারে ফারহানের সাথে কথা বলে আর তখন ফারহান আনন্দের সাথে রাজী হয়ে যায়।এরপর ব্যান্ডটি আবার কনসার্ট এ পারফরম্যান্স করা শুরু করে। তারপর ব্যান্ড থেকে সারফারাজ কিছুদিনের জন্য ব্যক্তিগত কারনে ত্যাগ করে। তখন সারফারাজের জায়গায় ফারহান এগিয়ে আসে এবং তখন ডেথ্রো ব্যান্ডের গীটারিস্ট জিব্রান গেস্ট হিসেবে ব্যান্ডে আসে। তার কিছু দিন পর আবার সারফারাজ ফায়ার আসে। আর তখন ব্যান্ডটি গেস্ট ড্রামার হিসেবে আরাফাতকে নিযুক্ত করে।আর সেই বছরই ক্রিপটিক ফেট ব্যান্ডের সবচেয়ে আলোকিত সময় যখন ক্রিপটিক ফেট রাওয়া ক্লাবের ওপেন এয়ার শোতে মাত্র ২টি গান গায় এবং তার মধ্যে একটি ছিল শ্রেষ্ঠ অ্যালবাম এর একটি গান।আর সেই কন্সার্টে পারফর্ম করে বাংলাদেশের অন্য জনপ্রিয় ব্যান্ড আর্টসেল ব্ল্যাক ডেথ্রো সহ আরো অনেকে।
২০০১ সালে ক্রিপটিক ফেট পেপ্সির কাছ থেকে স্পন্সরশীপ পায়।ইতিমধ্যে দূরে ভাইয়ের কম্পোজিশনে ছাড়পত্র অ্যালবাম এ ক্রিপটিক ফেট ডাক পায়। আর সিসিই অ্যালবাম এ ক্রিপটিক ফেট ব্যান্ড তাদের নতুন ড্রামার তূর্যকে নিয়ে কাজ করে।আর এই অ্যালবাম এ ক্রিপটিক ফেট বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে একটি গান যা তাদের অন্যতম জনপ্রিয় গান "চলো বাংলাদেশ" রচনা করে। আর সেই গানটি শ্রোতাদের মধ্যে বিপুল পরিমাণে সাড়া তৈরী করে ফেলে।তাদের ২০০২ সালে ছাড়পত্র অ্যালবাম এর অভাবনীয় সাফল্যের পর সেই বছরে তারা ২০০২সালে দূরে ভাই ঠিক করেন অনুশীলন নামে আরেকটি অ্যালবাম এ করার এবং ক্রিপটিক ফেট এই এলবামেও কাজ করার সুযোগ পায়। কিন্তু তখন দুর্ভাগ্যবসত তখন ব্যান্ডের ড্রামার তূর্য ব্যান্ড ত্যাগ করে চলে যায় এবং সৌভাগ্যক্রমে তাদের প্রধান গীটারিস্ট সারফারাজ ব্যান্ডে আবার ফিরে আসে।আর তখন ড্রামার তূর্য এর অনুপস্থিতে শাকিব এবং ফারহান স্টিক হাতে তুলে নেন এবং উপহার দেন 'এইতো চলছে' এবং সকাল ছয়টা' নামের দুইটি সিঙ্গেল ট্র্যাক। টানা ৪ বছর পর রেকর্ডিং হলো তাদের দ্বিতীয় অ্যালবাম "শ্রেষ্ঠ" এবং সেই অ্যালবাম এর ফলাফল ও অভাবনীয় সাফল্য।
২০০৩ সালে দিকে ব্যান্ডে আবার ফারশিদ ফিরে আসে।তখন পূর্ণগঠিত ব্যান্ড ক্রিপটিক ফেট আরসিসিতে ABC নামে আর্টসেল ব্ল্যাকের সাথে শো করে এবং সেখানে তারা ড্রিম থিয়েটারের সিন অফ এ মেমোরি মেটালিকার মাস্টার অফ এ পাপেটস এই গান দুইটি পারফর্মেন্স করে ।সেই সাথে তারা রিলিজ দেয় আগন্তুক মিক্সড এলবামের "বিদায়" এবং "প্রেম" নামে দুইটি সিংগেল ট্র্যাক ।এই গান দুইটি ও ভালো জনিপ্রিয়তা পায়।
তারপর ঠিক ২ বছর পর ২০০৫ সালের দিকে ক্রিপটিক ফেট বাহির করে তাদের তৃতীয় অ্যালবাম "দানব"। আর তাদের এই অ্যালবাম এর টাইটেল ট্র্যাক বাংলাদেশের দীর্ঘতম গান গুলোর মধ্যে একটি(১৩:০১)।আর এর পর থেকে তাদের প্রতিই শোতে এই অ্যালবাম এর গান রাগ ,যাত্রা, অগ্নিবীণা করা বলতে গেলে একরকম রুটিম হয়ে গেলো তাদের জন্য।
আর এই সময়ের মাঝে তারা মিক্সড অ্যালবাম এ কাজ করতে শুরু করলো। সেগুলোর মধ্যে অনাদরের সন্তান(যেটি এখন প্রায় সব জায়গাতেই পারফর্ম করে) কৃতিত্ব অন্ধ উল্লেখযোগ্য। তবে ক্রিপটিক ফেট এর সব থেকে জনপ্রিয় গান হলো চলো বাংলাদেশ।তাদের করা ছাড়পত্র অ্যালবাম এর পর তারা আবার এই গানটা নতুন করে রেকর্ডিং করে। আর তাদের করা এই গানটি ২০১১ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশ জাতীয় দলকে অনেক অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলো।তারপর এই গানের ধারাবাহিকতায় ক্রিপটিক ফেট ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের সময় "লড়বে বাংলাদেশ" নামে আরেকটি সিংগেল ট্র্যাক বের করে।বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাথে এই ব্যান্ডটি সব সময়ে ছিল আছে ভবিষ্যতেও থাকবে।তার কিছু দিন পর ক্রিপটিক ফেট ব্যান্ড বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটি অ্যালবাম তৈরী করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে।তারপর ব্যান্ডটি পরিকল্পনা অনুযায়ী ঠিক করে যে অ্যালবামটির নাম হবে মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস নিয়ে।এই অ্যালবাম এর প্রতিটি গান ক্রিপটিক ফেট এক মাস পর পর রিলিজ দেয়। ক্রিপটিক ফেট এর ড্রামার ফারশিদ এখানে কয়েকটা গানে বাজান তারপরে তিনি ব্যক্তিগত কারনে স্টিক তুলে দেন বাংলাদেশের আরেকজন অন্যতম ট্যালেন্টেড রায়েফ আল হাসান রাফার হাতে। বর্তমানে রায়েফ আল হাসান রাফা ক্রিপটিক ফেট ব্যান্ডে গেস্ট হিসেবে আছে। আর তারপর বন্ডটির করা বহুল জনপ্রিয় আক্রমণ গানটিতে রাফা সুন্দর ড্রামিং শুনতে পাওয়া যায়। তবে এর আগে ২০০২ সালে ক্রিপটিক ফেট ব্যান্ড হাতিয়ারে নামের বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মিক্সড অ্যালবাম এ তেপান্তর নামে একটি সিংগেল ট্র্যাক রিলিজ দেয়।বর্তমান সময়ে ব্যান্ডটি "যান্ত্রিক গোলযোগ" নামে তাদের আর একটি অ্যালবাম এর ব্যাস্ত কাজে ব্যাস্ত আছে। যে অ্যালবাম টি ২০০৭ সালে অনিবার্যকারনবশত রিলিজ পায়নি।
ক্রিপটিক ফেটের লিরিক্সে প্রধানত স্থান পায় দেশ মুক্তিযুদ্ধ রাজনীতি শোষণ। শ্রেষ্ঠ এলবামটি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দানব এলবামটি বলা যায় সমাজের শাসক শোসক রাজনীতি নিয়ে করা। ফেটের শুরুটা কিন্ত এত মসৃণ ছিলনা। অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে ফেট আজকের অবস্থানে এসেছে। তাদের প্রথম বাংলা এলবাম সাউন্ড কোম্পানি তাচ্ছিল্যের সাথে ফিরিয়ে দিয়েছিলো। তাও তারা দমে যায়নি। তাই তাদের গানের সাথে মিলিয়ে বলতেই হয়
" চলো ক্রিপটিক ফেট
আছে আমার দেশ"
ক্রিপটিক ফেট মানেই জীবন।
ক্রিপটিক ফেইটের মিক্সড অ্যালবাম এর তালিকা দেয়া হলো
লোভেরই আগুন পুড়িয়েছে আমায়
অন্যায়ের বাঁধনে ঘেরা আমি অসহায়
লোভেরই আগুন আজ এনেছে কোথায়"
আজ কথা বলবো বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় এবং মেটালস্ট্রিমের সবচেয়ে শক্তিশালী হেভি মেটাল ব্যান্ড ক্রিপটিক ফেটের কথা। এই শক্তিশালী হেভি মেটাল ব্যান্ডটি যাত্রা শুরু করে যখন, তখন চারিদিকে চলছে ফিলিংস, রক্সট্রাটা, ওয়ারফেজ, ওয়েভসদের জয়জয়কার। তখন তুমুল জনপ্রিয়তায় রয়েছিল এই ব্যান্ড গুলো। ওয়াহিদ এবং সারফারাজ নামের দুই স্কুল বালক হটাৎ করেই চিন্তা করলো আমরা নিজেরাই যদি একটা ব্যান্ড করি কেমন হয়।আর তাদের যেমন কথা ঠিক তেমনি কথা মতো ব্যান্ড তৈরির কাজে লেগে পড়লো তারা। তখন তারা তাদের এই পরিকল্পনার কথা জানালো তাদের স্কুলের অন্য তিন বন্ধু সাকিব ফারশিদ এবং ইরেশকে।তাদের জানানোর পর তারা ও খুব আনন্দের সাথেই তাদের পরিকল্পনার মতো কাজ করতে রাজি হয়ে গেলো। আর এই খানে থেকেই গঠিত হয়ে গেলো জনপ্রিয় এই ব্যান্ডটি। আর এই সময় তা ছিল ১৯৯৩ সাল। তখন ব্যান্ডের বেজ গিটারিস্ট ছিল সাকিব ,ড্রামার ছিল ফারশিদ এবং ভোকাল ছিল ইরেশ। তখন তারা চিন্তা করলো ব্যান্ড তো তৈরী হয়ে গেলো কিন্তু ব্যান্ডের কি নাম দিবে তারা। তখন তাদের ব্যান্ডের বেজ গিটারিস্ট সাকিব এগিয়ে এসে নাম দিলো ক্রিপটিক ফেইট।সব থেকে মজার ব্যাপারটা হলো নামটি সাকিব তারাবীর নামায পড়ার সময় হটাৎ চিন্তায় খুঁজে পেয়েছিলেন। ব্যান্ড তৈরির জন্য যা যা দরকার ছিল সবই তো হলো। কিন্তু এখন তো ব্যান্ডের জন্য প্রয়োজন গান।যে কোনো শো তে পারফরম্যান্সের জন্য প্রয়োজন গান কিন্তু তখন লাইভ কন্সার্টের সুযোগ কম থাকায় তাদের মনের মধ্যে একটা হতাশা নেমে এলো। তাদের প্রথম গান একক গান ছিল' ক্যাপ্টারস অফ ফেট ' ('Captors of Fate' ) তাদের প্রথম গানটি লিখেছিলো ফারশিদ এবং সেই গানের নামটি ও দিয়েছিলো। তাদের প্রথম গানের ডেমোটি ও তৈরী হয়েছিল ফারশিদ এর থাকার রুমে।কিন্তু শ্রোতাদের কাছে এই গানটি তেমন কোনো সাড়া পায়না। তারপর কিছু দিন যেতেই ফারশিদ ব্যান্ডটি ছেড়ে আমেরিকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলে আর ফারশিদ চলে যাবার পর ব্যান্ডটি ও বন্ধ হয়ে গেলো। তবে ফারশিদ যাবার সময় তার বন্ধুদের কথা দিয়ে গিয়েছিলো যে সে খুব দ্রুতই ফিরে আসবে এবং নতুন অ্যালবাম নিয়ে কাজ শুরু করবে।
ক্রিপটিক ফেট এর বর্তমান মেম্বার
- বেজঃ শাকিব চৌধুরী (১৯৯৩-বর্তমান)
- গীটারঃ কে.সারফারাজ (১৯৯৩-বর্তমান)
- ড্রামসঃ ফারশিদ মাহমুদ (১৯৯৩-বর্তমান)
- গীটার: ফারহান সামাদ (১৯৯৮-বর্তমান)
- গেস্ট ড্রামসঃ রায়েফ আল হাসান রাফা (২০১৩-বর্তমান)
ক্রিপটিক ফেট এর প্রাক্তন মেম্বার
- ইরেশ জাকের(১৯৯৩-১৯৯৪)
- ওয়াহিদ্দুজামান খান(১৯৯৩-১৯৯৭)
আর তারপর ফারশিদ তা কথা মতো গ্রীষ্মের ছুটিতে দেশে ফিরে আসে এবং ব্যান্ডের জন্য প্রথম অ্যালবাম এর কাজ শুরু করে দেয়। তাদের প্রথম অ্যালবাম এর ৮ টি গান এক মাসের মধ্যেই সম্পন্ন হয়ে যায়।তারপর অ্যালবাম এর রেকর্ডিং এবং মাস্টারিং করে সাউন্ডগার্ডেন স্টুডিওতে তাদের এই কাজ গুলো ও খুব দ্রুত হয়ে যায়। আর যার ফলে তাদের প্রথম অ্যালবাম তৈরী হয়ে যায়। এই ব্যান্ডের প্রথম অ্যালবাম এ ড্রামার ফারশিদ গীটারে ওয়াহিদ এবং সারফারাজ আর ভোকালে শাকিব তারা মিলেই অ্যালবাম এর কাজ শেষ করে।তাদের প্রথম অ্যালবাম এর নাম ছিল 'Ends are forever' (ইন্ডস আর ফরএভার) ।তাদের অ্যালবাম টি রিলিজ হয় ১৯৯৩ সালে দিকে। তখন তাদের এই অ্যালবাম টি ইংলিশ মেটাল ভক্তদের মনে অভূতপূর্ব সাফল্য লাভ করে। তারপর ফারশিদ আবার আমেরিকা চলে আসে।
আর এরমধ্যেই শাকিব এবং সারফারাজের সাথে পরিচয় হয় ফারহানের।১৯৯৭ সালে ক্রিপটিক ফেট ব্যান্ডটি তাদের প্রথম লাইভ শোতে পারফর্মেন্স করে। সেই শোতে তারা খুব ভালো সাপোর্ট পায়। আর তখনি তারা ঠিক করে তাদের পরবর্তী অ্যালবাম এর কাজের জন্য।আর তার কিছু দিন পর শুরু করে তাদের প্রথম বাংলা অ্যালবাম এর কাজ। তাদের অ্যালবাম এর কাজ ও খুব দ্রুত সম্পূর্ন্ন হয়ে যায় কিন্তু কোনো রেকর্ডিং কোম্পানি তাদের এই অ্যালবাম টি নিতে চায় না। আর এর মধ্যে তাদের নতুন অ্যালবাম এর কিছু গান আগেই বাহির হয়ে যায় শ্রোতাদের মধ্যে এবং অ্যালবাম এর সেই গান গুলো অভাবনীয় সাড়া পায়।আর তার ফলে ক্রিপটিক ফেট ও আরো ভালো জনপ্রিয়তা পেতে থাকে। তারপর ব্যান্ডের অন্যতম গিটারিস্ট ওয়াহিদ ব্যান্ড ত্যাগ করে চলে যায়।আর তখন ক্রিপটিক ফেট এর প্রয়োজন সেই জায়গায় আর একজন গিটারিস্ট।তখন ক্রিপটিক ফেট এই ব্যাপারে ফারহানের সাথে কথা বলে আর তখন ফারহান আনন্দের সাথে রাজী হয়ে যায়।এরপর ব্যান্ডটি আবার কনসার্ট এ পারফরম্যান্স করা শুরু করে। তারপর ব্যান্ড থেকে সারফারাজ কিছুদিনের জন্য ব্যক্তিগত কারনে ত্যাগ করে। তখন সারফারাজের জায়গায় ফারহান এগিয়ে আসে এবং তখন ডেথ্রো ব্যান্ডের গীটারিস্ট জিব্রান গেস্ট হিসেবে ব্যান্ডে আসে। তার কিছু দিন পর আবার সারফারাজ ফায়ার আসে। আর তখন ব্যান্ডটি গেস্ট ড্রামার হিসেবে আরাফাতকে নিযুক্ত করে।আর সেই বছরই ক্রিপটিক ফেট ব্যান্ডের সবচেয়ে আলোকিত সময় যখন ক্রিপটিক ফেট রাওয়া ক্লাবের ওপেন এয়ার শোতে মাত্র ২টি গান গায় এবং তার মধ্যে একটি ছিল শ্রেষ্ঠ অ্যালবাম এর একটি গান।আর সেই কন্সার্টে পারফর্ম করে বাংলাদেশের অন্য জনপ্রিয় ব্যান্ড আর্টসেল ব্ল্যাক ডেথ্রো সহ আরো অনেকে।
২০০১ সালে ক্রিপটিক ফেট পেপ্সির কাছ থেকে স্পন্সরশীপ পায়।ইতিমধ্যে দূরে ভাইয়ের কম্পোজিশনে ছাড়পত্র অ্যালবাম এ ক্রিপটিক ফেট ডাক পায়। আর সিসিই অ্যালবাম এ ক্রিপটিক ফেট ব্যান্ড তাদের নতুন ড্রামার তূর্যকে নিয়ে কাজ করে।আর এই অ্যালবাম এ ক্রিপটিক ফেট বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে একটি গান যা তাদের অন্যতম জনপ্রিয় গান "চলো বাংলাদেশ" রচনা করে। আর সেই গানটি শ্রোতাদের মধ্যে বিপুল পরিমাণে সাড়া তৈরী করে ফেলে।তাদের ২০০২ সালে ছাড়পত্র অ্যালবাম এর অভাবনীয় সাফল্যের পর সেই বছরে তারা ২০০২সালে দূরে ভাই ঠিক করেন অনুশীলন নামে আরেকটি অ্যালবাম এ করার এবং ক্রিপটিক ফেট এই এলবামেও কাজ করার সুযোগ পায়। কিন্তু তখন দুর্ভাগ্যবসত তখন ব্যান্ডের ড্রামার তূর্য ব্যান্ড ত্যাগ করে চলে যায় এবং সৌভাগ্যক্রমে তাদের প্রধান গীটারিস্ট সারফারাজ ব্যান্ডে আবার ফিরে আসে।আর তখন ড্রামার তূর্য এর অনুপস্থিতে শাকিব এবং ফারহান স্টিক হাতে তুলে নেন এবং উপহার দেন 'এইতো চলছে' এবং সকাল ছয়টা' নামের দুইটি সিঙ্গেল ট্র্যাক। টানা ৪ বছর পর রেকর্ডিং হলো তাদের দ্বিতীয় অ্যালবাম "শ্রেষ্ঠ" এবং সেই অ্যালবাম এর ফলাফল ও অভাবনীয় সাফল্য।
২০০৩ সালে দিকে ব্যান্ডে আবার ফারশিদ ফিরে আসে।তখন পূর্ণগঠিত ব্যান্ড ক্রিপটিক ফেট আরসিসিতে ABC নামে আর্টসেল ব্ল্যাকের সাথে শো করে এবং সেখানে তারা ড্রিম থিয়েটারের সিন অফ এ মেমোরি মেটালিকার মাস্টার অফ এ পাপেটস এই গান দুইটি পারফর্মেন্স করে ।সেই সাথে তারা রিলিজ দেয় আগন্তুক মিক্সড এলবামের "বিদায়" এবং "প্রেম" নামে দুইটি সিংগেল ট্র্যাক ।এই গান দুইটি ও ভালো জনিপ্রিয়তা পায়।
তারপর ঠিক ২ বছর পর ২০০৫ সালের দিকে ক্রিপটিক ফেট বাহির করে তাদের তৃতীয় অ্যালবাম "দানব"। আর তাদের এই অ্যালবাম এর টাইটেল ট্র্যাক বাংলাদেশের দীর্ঘতম গান গুলোর মধ্যে একটি(১৩:০১)।আর এর পর থেকে তাদের প্রতিই শোতে এই অ্যালবাম এর গান রাগ ,যাত্রা, অগ্নিবীণা করা বলতে গেলে একরকম রুটিম হয়ে গেলো তাদের জন্য।
আর এই সময়ের মাঝে তারা মিক্সড অ্যালবাম এ কাজ করতে শুরু করলো। সেগুলোর মধ্যে অনাদরের সন্তান(যেটি এখন প্রায় সব জায়গাতেই পারফর্ম করে) কৃতিত্ব অন্ধ উল্লেখযোগ্য। তবে ক্রিপটিক ফেট এর সব থেকে জনপ্রিয় গান হলো চলো বাংলাদেশ।তাদের করা ছাড়পত্র অ্যালবাম এর পর তারা আবার এই গানটা নতুন করে রেকর্ডিং করে। আর তাদের করা এই গানটি ২০১১ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশ জাতীয় দলকে অনেক অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলো।তারপর এই গানের ধারাবাহিকতায় ক্রিপটিক ফেট ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের সময় "লড়বে বাংলাদেশ" নামে আরেকটি সিংগেল ট্র্যাক বের করে।বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাথে এই ব্যান্ডটি সব সময়ে ছিল আছে ভবিষ্যতেও থাকবে।তার কিছু দিন পর ক্রিপটিক ফেট ব্যান্ড বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটি অ্যালবাম তৈরী করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে।তারপর ব্যান্ডটি পরিকল্পনা অনুযায়ী ঠিক করে যে অ্যালবামটির নাম হবে মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস নিয়ে।এই অ্যালবাম এর প্রতিটি গান ক্রিপটিক ফেট এক মাস পর পর রিলিজ দেয়। ক্রিপটিক ফেট এর ড্রামার ফারশিদ এখানে কয়েকটা গানে বাজান তারপরে তিনি ব্যক্তিগত কারনে স্টিক তুলে দেন বাংলাদেশের আরেকজন অন্যতম ট্যালেন্টেড রায়েফ আল হাসান রাফার হাতে। বর্তমানে রায়েফ আল হাসান রাফা ক্রিপটিক ফেট ব্যান্ডে গেস্ট হিসেবে আছে। আর তারপর বন্ডটির করা বহুল জনপ্রিয় আক্রমণ গানটিতে রাফা সুন্দর ড্রামিং শুনতে পাওয়া যায়। তবে এর আগে ২০০২ সালে ক্রিপটিক ফেট ব্যান্ড হাতিয়ারে নামের বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মিক্সড অ্যালবাম এ তেপান্তর নামে একটি সিংগেল ট্র্যাক রিলিজ দেয়।বর্তমান সময়ে ব্যান্ডটি "যান্ত্রিক গোলযোগ" নামে তাদের আর একটি অ্যালবাম এর ব্যাস্ত কাজে ব্যাস্ত আছে। যে অ্যালবাম টি ২০০৭ সালে অনিবার্যকারনবশত রিলিজ পায়নি।
ক্রিপটিক ফেটের লিরিক্সে প্রধানত স্থান পায় দেশ মুক্তিযুদ্ধ রাজনীতি শোষণ। শ্রেষ্ঠ এলবামটি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দানব এলবামটি বলা যায় সমাজের শাসক শোসক রাজনীতি নিয়ে করা। ফেটের শুরুটা কিন্ত এত মসৃণ ছিলনা। অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে ফেট আজকের অবস্থানে এসেছে। তাদের প্রথম বাংলা এলবাম সাউন্ড কোম্পানি তাচ্ছিল্যের সাথে ফিরিয়ে দিয়েছিলো। তাও তারা দমে যায়নি। তাই তাদের গানের সাথে মিলিয়ে বলতেই হয়
" চলো ক্রিপটিক ফেট
আছে আমার দেশ"
ক্রিপটিক ফেট মানেই জীবন।
ক্রিপটিক ফেইটের মিক্সড অ্যালবাম এর তালিকা দেয়া হলো
- ২০০০: চলো বাংলাদেশ(ছাড়পত্র)
- ২০০১: সকাল ছয়টা(অনুশীলন)
- ২০০১: এইতো চলছে(অনুশীলন)
- ২০০২: অধিকার(প্রজন্ম)
- ২০০৩: আশীর্বাদ(দিন বদল)
- ২০০৩: গন্তব্য(লোকায়ত)
- ২০০৩: বিদায়(আগন্তুক)
- ২০০৪: প্রেম (আগন্তুক ২)
- ২০০৫: অনাদরের সন্তান(আগন্তুক ৩)
- ২০০৬: কৃতিত্ব(লাইভ নাউ)
- ২০১০: অন্ধ(রক ৪০৪)
- ২০১১: চলো বাংলাদেশ(চলো বাংলাদেশ)
- ২০১২: তেপান্তর(হাতিয়ার)
- ইন্ডস আর ফরএভার (1993)
- শ্রেষ্ঠ(২০০৩)
- দানব(২০০৬)
- নয় মাস কম্পিলেশন এলবাম(২০১৩)
Comments
Post a Comment