গানের জলে ভক্তদের ভাসানো যাদের একমাত্র লক্ষ্য তারাই হলো জলের গান ব্যান্ড। কি ভাসতে চান নাকি ?

একটা পরিবার । সেখানে মাথার ঘাম পায়ে ফেলা বাবা আছেন, আছেন সর্বসংহা মা, উড়ুউড়ু যুবক, প্রেম সাগরে ভাসা তরুণী, স্কুল পড়ুয়া ছেলে পুলে আছে । তাদের সবার ভাল লাগার মানে টা আলাদা । কেউ মান্না দে, কেউ রবীন্দ্র সংগীত, কেউ অনুপম রয়, কেউ আর্টসেল, অর্থহীন, কেউবা অরিজিৎ-তাহসানে নিজের ভাল লাগা খুজে পায় । কিন্তু একটা ব্যান্ড আছে । যার গান শুনে যে কেউ বলে উঠবে ওয়াও! সে যেই হোক না কেন । আর সেই ব্যান্ডটি হল জলের গান । 
জলেরগান বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ফোক-ফিউশন ধরণের ব্যান্ড। এই ব্যান্ডটি মূলত ফোক গানের উপরে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে। জলেরগান ব্যান্ডটি যাত্রা শুরু করে ২০০৬ সালের দিকে। মানুষের জীবনের গল্প ও কথা গুলো নিয়েই তারা গানের কথাগুলো তৈরী করে। তাদের কম্পোজিশন এ রয়েছে অদ্ভুত ভিন্নতা যা অন্য সকল ব্যান্ডে খুব একটা দেখা যায় না। তাদের গানের গভীরতা রয়েছে অনেক বেশি কিন্তু তাদের গানের কথা গুলো খুব সহজ ও সাবলীল যার কারণে তাদের গানের মনোভাব বুজতে তেমন একটা কঠিন হয় না, খুব সহজেই বুঝা যাই তাদের গানের কথা গুলো। আর তার সাথে রয়েছে তাদের জানা অজানা নানারকম বাদ্যযন্ত্রের ব্যাবহার যা বর্তমান যুগে কোনো ব্যান্ডকে তেমন একটা ব্যবহার করতে দেখা যাই না। তবে তাদের গ্রহনযোগ্যতা বহুগুন বাড়িয়ে দিয়েছে এই নানারকম অজানা বাদ্যযন্ত্রের ব্যাবহার কারণেই। এই ব্যান্ডের লাইট মিউজিক এরেন্জমেন্ট যেমন ছেলে বুড়ো সবাইকে টানে ,ঠিক তেমনি তাদের গানের গভীরতা সংগীতবোদ্ধাদের ও মন জয় করে নয় খুব সহজে। জলের গানের তুলনা শুধু জলের গানের সাথেই করা যায়। তাদের তুলনা অন্য কোনো ব্যান্ডের সাথে করা হবে বোকামি। কারণ তাদের ভিন্নতা তারা নিজেরাই তৈরী করে নিয়েছে তাদের যোগ্যতার বলে।তাই এই ব্যান্ড এর  একটা আলাদা মৌলিকত্ব আছে ।
 
জলেরগান মানেই হচ্ছে নতুন নতুন বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার। তাদের এই বাদ্যযন্ত্রের ব্যাবহারে এদের প্রসংশা করতে বাধ্য হতেই হবে। জলের গান তাদের কিছু বাদ্যযন্ত্র নিয়ে এসেছে সুদুর ব্রাজিল কিউবা থেকে। তাছাড়া ও তাদের অনেক বাদ্যযন্ত্র সংগ্রহ করেছে দেশের আনাচে কানাচে থেকে যে বাদ্যযন্ত্র নিয়ে তেমন কোনো ব্যান্ড কখনো হয়তো চিন্তাই করে নি সেই ধরণের বাদ্যযন্ত্র তারা ব্যবহার করে তাদের ব্যান্ড পারফরমেন্সে। তাছাড়াও তারা তাদের ব্যবহারের জন্য নিজেদের মন মতো করে অনেক বাদ্যযন্ত্র তৈরী ও করে থাকে।এই ব্যান্ড এর প্রায় সকল মেম্বার চারুকলার ছাত্র । তাই তারা বাদ্যযন্ত্র তৈরিতে ও অনেক বেশি পারদর্শী।শিল্পী মানুষ, আত্মভোলা ।তাদের চাহিদাও নামে মাত্র । যা ছিল খুব অবাক করার মতো। জলের গানের প্রথম যখন তারা বাহির করে তখন তাদের অ্যালবামটা তারা বিক্রয় করেছিল মাত্র চল্লিশ টাকা করে। তারা গান পাগল ভক্তদের জন্য অ্যালবামটার দাম খুব কম রেখেছিলেন।যাতে সকলেই তাদের গান গুলো শুনার সুযোগ পায় এই চিন্তা করে। এই যুগে এইটা চিন্তা করতেই অবাক লাগে যে ৪০ টাকায় ১০ টি গানের একটি অ্যালবাম তা আসলেই অবাক করার মতো। প্রতিটি গানের মূল্য মাত্র ৪ টাকা। এত কম দাম হওয়া সত্ত্বে ও কেউ একটি অ্যালবাম কিনতে চায় না।  সকলেই চায় তার থেকে বেশি টাকা খরচ করে করে ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করতে। কিন্তু আমরা এইটা কখনো ভাবি না একটা অ্যালবাম  তৈরী করতে একটা ব্যান্ডের কত টা ত্যাগ আর পরিশ্রম করতে হয়। হ্যা হয়তো আমরা বুঝি তবে বুঝে ও না বুঝার মতো ভ্যান করে থাকি। দিন শেষে সেই ইন্টারনেট থেকেই গানটা ডাউনলোড করি। যা আসলেই খুব কষ্টের ও হতাশার একটা ব্যান্ডের জন্য ,এই বিষয়টা সব ব্যান্ডের ক্ষেত্রে একই। জলের গান যেকোনো কন্সার্টে অংশ নিতে ও খুব কম পারিশ্রমিক নেয়। যা আসলেই অবাক হবার মতো। এছাড়া ও জলের গান অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আর্থসামাজিক উন্নয়ন কাজে বলতে গেলে ফ্রি তে ও অনেক কনসার্ট করেছে। যা ও অনেক অবাক করা একটা বিষয়। 

জলের গান তাদের দীর্ঘ ১১ বছরের পথ চলায় তারা দুইটি অ্যালবাম তাদের ভক্তদের উপহার দিয়েছে। তাদের প্রথম অ্যালবামটি ছিল (অতল জলের গান) .সেই অ্যালবামটি তারা বাজারে প্রকাশ করে ২০১৩ সালের,১২ এপ্রিল তারিখে। তারা তাদের যাত্রা শুরুর প্রায় ৭ বছর পর তাদের প্রথম অ্যালবাম রিলিজ করে।আর তাদের প্রথম অ্যালবাম অতল জলের গান রিলিজ হবার পর দারুন ভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করতে থাকে। তাদের ঐ অ্যালবাম টি তাদের পরিচিতি বহু গুন্ বাড়িয়ে দেয়। তাদের প্রথম অ্যালবাম এর সফলতা পবার পর জলের গান তাদের দ্বিতীয় অ্যালবাম বাহির করা সীদ্ধান্ত নেয়। তারা তাদের দ্বিতীয় অ্যালবাম রিলিজ করে ২০১৪ সালের  ১ জুন।তাদের দ্বিতীয় অ্যালবাম এর নাম ছিল (পাতাল জলের গান)। তাদের এই অ্যালবাম টি ও খুব ভালো দর্শকপ্রিয়তা পায়।জলের গান ২০০৬ সালে যাত্রা শুরুর পর ৭ বছর কোনো অ্যালবাম বাহির করে না তবে এই ৭ বছরে তারা তাদের অনেক গুলো সিঙ্গেল ট্র্যাক বাজারে রিলিজ করে।  সেই গান গুলো ও দারুন দর্শক জনপ্রিয়তা পায়। 

জলের গান ব্যান্ডটির বর্তমান সদস্যবৃন্দঃ

রাহুল আনন্দ- ভোকাল, লিরিক্স, কম্পোজার, বাঁশী, সানাই, ম্যান্ডোলা 
কনকাদিত্য- ভোকাল, লিরিক্স, কম্পোজার, দোতারা, শুকতারা, নয়নতারা, পিয়ানিকা 
শিউলি ভট্টাচার্য- বেহালা 
সাইফুল জার্নাল- ভোকাল, পার্কাশন 
রানা সরোয়ার- কাজন, পার্কাশন, গিটার, পিয়ানো । 
এ বি এস জেম- ভোকাল, গিটার 
শ্যামল কর্মকার- ড্রামস, ঢোল, পার্কাশন 
আসীর আরমান- ডাবল বেজ, তোতাব্যান । 




জলের গানের প্রথম অ্যালবাম অতল জলের গান এর গানের তালিকা দেয়া হলো :

গান :এমন যদি হতো 
অ্যালবাম :অতল জলের গান(২০১৩)

গান :পাতার গান 
অ্যালবাম :অতল জলের গান(২০১৩) 

গান :বকুল ফুল 
অ্যালবাম:অতল জলের গান(২০১৩)

গান :কাগজের নৌকা 

অ্যালবাম:অতল জলের গান(২০১৩)

গান :বাউলা বাতাস 
অ্যালবাম :অতল জলের গান (২০১৩)

গান :ঝরা পাতার গান 
অ্যালবাম :অতল জলের গান(২০১৩)

গান :দূরে থাকা মেঘ
অ্যালবাম : অতল জলের গান(২০১৩)

গান :বৃষ্টির গান 

অ্যালবাম :অতল জলের গান (২০১৩)

গান :রঙের গান
অ্যালবাম:অতল জলের গান (২০১৩)

গান :উড়ছি কেন 

অ্যালবাম:অতল জলের গান (২০১৩)

জলের গানের দ্বিতীয় অ্যালবাম পাতাল জলের গান এর গানের তালিকা দেয়া হলো :

গান :আঁধার রাইতে
অ্যালবাম :পাতালপুরের গান (২০১৪)

গান : এই পাগল ! 
অ্যালবাম :পাতালপুরের গান (২০১৪)

গান :এক কাপ চা 
অ্যালবাম :পাতালপুরের গান(২০১৪)

গান :বাউল বাতাস-২ 

অ্যালবাম :পাতালপুরের গান (২০১৪)

গান :পাখির গান 
অ্যালবাম :পাতালপুরের গান (২০১৪)

গান :গীতল চিঠি 
অ্যালবাম :পাতালপুরের গান (২০১৪)

গান :একাকী আসর 
অ্যালবাম :পাতালপুরের গান (২০১৪)

গান :পংখীরাজ 

অ্যালবাম :পাতালপুরের গান (২০১৪)

গান :ঘুম ভাঙানিয়া গান 
অ্যালবাম পাতালপুরের গান (২০১৪)

গান :আর নাই কেউ 
অ্যালবাম পাতালপুরের গান (২০১৪)

গান :নৈশ্বব্দে ঢেউ 

অ্যালবাম পাতালপুরের গান (২০১৪)

২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত জলের গান ব্যান্ড অন্য সকল ব্যান্ডের মতোই ভাঙা গড়ার মধ্যে দিয়ে গেছে ।তাদের ব্যান্ড থেকে ও চলে গিয়েছে অনেক সদস্য।আবার নতুন করে যোগদান ও করেছে অনেক সদস্য।

ব্যান্ডটি ছেড়ে যে সকল সদস্যবৃন্দ চলে গিয়েছে তাদের তালিকা দেয়া হলো :


  • ফজলুল কাদের চৌধুরী মিঠু
  • আল ফাহমি কাজী বাশার কার্তিক
  • মোঃ শরীফুল ইসলাম
  • পারিজাত মৌমন
  • সঞ্জয় কুমার সাহা

বর্তমানে ইলেক্ট্রনিক বাদ্যযন্ত্র এর যুগেও জলের গান ব্যান্ড এক্যুস্টিক দিয়েই এত সুন্দর সুন্দর গান উপহার দিচ্ছে ।যা ভাবতেই অবাক লাগে,আর তখন মনের অজান্তেই তাদের জন্য শ্রদ্ধা জন্মায় ।এবং ভালোবাসতে ইচ্ছা করে তাদের গান এবং ব্যান্ডকে। 
সব কথার শেষ কথা, যারা জলের গানকে গেয়ো বলেন তাদের বলি, যান নিজের রুচিতে একটু গায়ের ধুলোবালি লাগিয়ে আসুন । আত্মাটা বেচে থাকবে । 
যারা জলের গান শোনেন নি তারা এই ব্যান্ডের এই গান গুলো একবার শুনে দেখুন তারপর বুজবেন ব্যান্ড তা কি জিনিস। তারপর যখন তাদের অন্য গান গুলো যখন শুনবেন তখন নিজে থেকেই তাদের গুণগান করতে থাকবেন। 
বকুল ফুল, 
পাতার গান, 
ঝড়া পাতার গান, 
আয়না, 
বাউলা বাতাস ১ 

অবশ্যই একবার হলে ও শুনুন তারপর নিজের মন কে বলুন এই গুলো গান নাকি জীবনের কথা। তখন আফসোস করবেন অবশ্যই কারণ এত দিন এই গান গুলো আপনার কাছে ছিল না। আপনি শুনেন নি। তাই বলছি ভাইয়া এই ব্যান্ডকে ছোট করে দেখার আগে একটু তাদের গানের জগতে ডুব দিয়েই দেখুন না।  তার পর না হয় সমালোচনা করবেন।

জলের গান ব্যান্ডকে নিয়ে লিখার অনুপ্রেরণা পেয়েছি  Sakib R Siddique ভাইয়ার লিখা থেকে । 

Comments

Popular posts from this blog

শাবনূরের লাইফস্টাইল অজানা অনেক তথ্য I আসল নাম | উচ্চতা I ওজন I শারীরিক পরিমাপ | বয়স | পড়ালেখা | স্বামী | ক্যারিয়ারের অর্জন | বাড়ি | জীবনী এবং উল্লেখযোগ্য সিনেমায় ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্ককে জানতে অবশ্যই পড়ুন

বাংলাদেশী ব্যান্ডের আন্ডাররেটেড গান সমূহের তালিকা দেয়া হলো । নতুন কিছু গানের স্বাদ পেতে অবশ্যই পড়ুন।

পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান ২০ টি বস্তু, যা এতটাই দামী আপনি শুনে অবাক না হয়ে পারবেন না,জানতে অবশ্যই পড়ুন।