আজ আমি সব খুলে বলবো ,সালমান শাহ আর আমার সম্পর্ক যেমন সেই বিষয়ে - বললেন শাবনূর

ঢাকাই চলচ্চিত্রে এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী জনপ্রিয় নায়কের নাম সালমান শাহ। সালমান শাহের ঢাকাই চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবি দিয়ে ১৯৯৩ সালে। সালমান শাহ তার চলচ্চিত্র জীবনে দর্শকদের উপহার  দিয়েছেন ২৭টি ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র।এই ২৭ টি সিনেমা এখনকার দর্শকদের কাছে ও অনেক জনপ্রিয় পেয়েছে।আর এই অপ্রতিদ্বন্দ্বী জনপ্রিয় নায়কের অধিকাংশ ছবিরই নায়িকা ছিলেন শাবনূর। শাবনূর বর্তমানে চলচ্চিত্র থেকে অনেক দূরে রয়েছেন। তিনি তার পরিবার নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছেন। সালমান শাহের  বিষয়ে অনেক কথা বলেন নায়িকা শাবনূর।নায়িকা শাবনূরের সেই বক্তব্যটি আপনাদের জন্য তুলে ধরা হলো :


নায়িকা শাবনূর কথার শুরুতেই বলেন আমার সাথে সালমান শাহের সম্পর্ক নিয়ে অনেক কথাই শুনছি অনেক আগে থেকে। আজ এই বিষয়টা আমি আপনাদের কাছে পরিষ্কার করতে চাই। আমার সম্পর্কে যারা এই সব কথা বলেন তাদের আমি বলতে চাই ,এই সব কথার একটা কথা ও সত্য না। আমার সাথে সালমান শাহের কোনো প্রেমের সম্পর্ক ছিল না।সালমান শাহের কোনো আপন বোন ছিল তাই সালমান শাহ আমাকে তার ছোট বোন বানিয়েছিলো। আর তিনি আমাকে সব সময় ছোট বোনের চোখেই দেখতেন। আমাকে তিনি আদর করে সালমান শাহ পিচ্চি বলে ডাকত। এমনকি সালমান শাহের মা-বাবা ও আমাকে মেয়ের মতো আদর করতেন। সালমান শাহের কারণেই সালমান শাহের মা-বাবা আমাকে মেয়ে চোখে দেখতেন।

শাবনূরের চোখে সালমান শাহ

সালমান শাহ আমাকে যেমন ছোট বোনের মতো দেখতেন এবং ছোট বোনের মতো আদর করতেন। ঠিক তেমনি আমি ও সালমান শাহ কে বড় ভাইয়ের মতো দেখতাম এবং তাঁকে সেভাবেই বড় ভাইয়ের মতো সম্মান করতাম। তবে এছাড়া ও আমার আর সালমান শাহের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ একটা সম্পর্কও ছিল। আর এইটা হয়তো আপনারা জানেন না ,সালমান শাহের বউ সামিরাও আমার অনেক কাছের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল।সালমান শাহের একটা গোপন তথ্য এইটা কখনো মিডিয়ায় প্রকাশ করা হয় নি,সালমান শাহ নাচ এ তেমন একটা পারদর্শী ছিল কিন্তু। কিন্তু সালমান শাহের তুলনায় আমি নাচে মোটামুটি পারদর্শী ছিলাম। আর যার কারণে সালমান শাহ আমাকে বলতো তাকে যেন একটু নাচ দেখিয়ে দেই। সে মাঝে মাঝেই  নাচ দেখিয়ে দেয়ার কথা বলতো। সালমান শাহ বলতো আমাকে একটু নাচ শিখিয়ে দে তো। আর এই বিষয়ে আমি ও তাকে আগ্রহের সাথেই দেখিয়ে দিতাম।


সালমান শাহের সাথে শাবনূরের প্রথম দেখা 

আমার এফডিসিতে প্রথম সালমান শাহের সাথে দেখা হয়। তখন সালমান শাহ মৌসুমী আপুর সাথে কোনো এক সিনেমার শুটিং করছিল। তারপর আসা-যাওয়ার মধ্যেও সালমান শাহের সাথে দেখা হতো। তবে তখন সালমান শাহের সাথে কথা তেমন একটা হতো না। তখন এফডিসিতে খুব বেশি তার নাম শুনা যেত সবাই বলতো ফিল্মে সালমান শাহ নাম নতুন একজন নায়ক এসেছে ,সেই নায়ক খুব ভালো অভিনয় করছে। এমন কথা খুব বেশি শুনা যেত তখন। আমার সাথে সালমান শাহের আনুষ্ঠানিক পরিচয় হয় তার সাথে আমার অভিনয় করা প্রথম ছবি তুমি আমার চলচ্চিত্রে কাজ করার মাধ্যমে। তখন তার সাথে সিনেমার  কাজের কারণেই বন্ধুত্ব হয়ে যায়। আর আমাদের অভিনয় করা প্রথম সিনেমা তুমি আমার যখন মুক্তি পায়। তখন ছবিটি সুপারহিট হয়েছিল।

শাবনূরের স্মৃতিতে সালমান শাহ 

সালমান শাহ আমার ভালো বন্ধু ও বড় ভাই ছিলেন। আমার তাকে কে অনেক বেশি মনে পরে। আজ যদি সালমান শাহ আমাদের মাঝে বেঁচে থাকতেন তাহলে তিনি যে কোন জায়গায় থাকতেন এইটা শুধু সে নিজেই জানে। আমার কাছে মনে হয় সালমান শাহ বেঁচে থাকলে এক সাথে আমাদের অনেক সিনেমা করা হতো, আর তার ফলে আমাদের জুটিটা অনেক জনপ্রিয়তা পেতো ,ঠিক যেমন জনপ্রিয় ছিল  কলকাতার উত্তম কুমার আর সুচিত্রা সেনের জুটি। আমাদের দুই জনকে এই ভাবেই গ্রহণ করত বলে আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি। আর তা হলে হয়তো আমাদের দেশের চলচ্চিত্রের অবস্থাও এজাজকের মতো এত করুন হতো না বলে আমার ধারণা। 


সালমান–শাবনূর প্রেমের গুঞ্জন আমার কাছে এই গুজবের কোনো ভিত্তি নেই 

সালমান শাহ আমার বড় ভাই ছিল। সালমান শাহ কে আমি ভাই ছাড়া আর অন্য কোনো চোখে কখনো দেখি ও নি কখনো অন্য কিছু ভাবনায় ও আসে নি। এই গুয়েজব সম্পর্কে আমি একটা কোথায় বলবো এই গুজব পুরোটাই মিথ্যা। সালমান শাহের মৃত্যুর পর কিছু লোকজন এই অপপ্রচার গুলো চালিয়েছে ,কারণ তারা আমাকে জড়িয়ে ব্যবসা করতে চেয়েছে।  আর বিষয় নিয়ে অনেক সাংবাদিকও আমাদের দুইজনের সম্পর্ক নিয়ে অনেক মুখরোচক গল্প ছেপেছেন যা দেখা ও আমি চুপ করে ছিলাম ,তখন কিছুই করার ছিল না আমার। তাদের এইটা করে কি এমন লাভ হয়েছে তারা আমার থাকে এইটা অবশ্যই ভালো জানবেন। তাদের কি লাভ হয়েছে আমি তা জানি না। বাংলা চলচিত্রে আমি আমার ক্যারিয়ারটা  অনেক কষ্ট করে গড়ে তুলেছিলাম। আর কিছু সংখ্যক লোক আমার আর সালমান শাহ এর সম্পর্ক নিয়ে গুজব ছড়িয়ে আনন্দ পাওয়ার চেষ্টা করেছেন। যা খুবই  কষ্টের ছিল আমার জন্য। 

সালমান শাহকে যেমন দেখেছে  শাবনূর

সালমান শাহকে এক কোথায় অনেক বড় মনের একজন ভালো মানুষ ছিলেন। তার থেকে বয়সে বড় সকলকে সালমান শাহ অনেক বেশি সম্মান করতেন। আমার জানা মতে তাকে আমি কখনো কারো সাথে  অহংকার বা হিংসা করতে দেখিনি। তার মধ্যে কোনো অহংকার বলতে কিছু ছিল না। অনেক বেশি ভালো একজন মানুষ ছিলেন। আর তার সব থেকে যে বিষয় তা আমার ভালো লাগতো তিনি সহশিল্পীদের সবার প্রতি অনেক বেশি আন্তরিক ছিলেন।  আর তিনি ছিলেন একজন কাজপাগল মানুষ। আর আমার আর সালমান শাহ এর সব সময় বোঝাপড়াটা ছিল অনেক বেশি চমৎকার। এক কোথায় বলতে পারেন,আমরা এক জন অন্য জনের চোখের ইশারা খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারতাম।


সালমানের স্ত্রী সামিরার সঙ্গে শাবনূরের যে সকল স্মৃতি রয়েছে 

সালমান শাহের শুটিংয়ে প্রায় সব সময় তার বউ সামিরা সঙ্গেই দেখেছি। আমি ,সালমান শাহ এবং সামিরা আমরা তিনজন খুব ভালো ও ঘনিষ্ট বন্ধু ছিলাম। এই সব বিষয়ে অনেকেই অনেক কথা বলছে , তবে আমি আর সামিরা সত্যিকারে অনেক ভালো বন্ধু ছিলাম। এইটা এখন আমি আর সামীরাই ভালো জানি। আমরা দুইজন কত যে ভালো সময় এক সাথে কাটিয়েছি তা আসলে হিসাব করে বুঝানো যাবে না। আমাদের ঘনিষ্টতা এতটাই ছিল যে ,এমন ও অনেক সময় ছিল যখন সামিরা আমাকে চুড়ি পরিয়ে দিয়েছে। আমাকে কোন পোশাকে দেখতে ভালো লাগবে কোন পোশাকে ভালো লাগবে না ,কোন মশক আমাকে ভালো মানাবে ,এই সব সে প্রায় আমাকে বলে দিতো। আমার ড্রেস এর সাথে মিলিয়ে আমাকে কানের দুলগুলো ও সে পরিয়ে দিতো। আর সব থেকে বড় বিষয়  আমাদের মধ্যে কখনো কোনো বিষয় নিয়ে কোনো দিন কোনো ধরণের মনোমালিন্য হয়নি।


সালমান শাহের মৃত্যুসংবাদ শোনার পর শাবনূরের অবস্থা কি রকম ছিল

সালমান শাহের মৃত্যুসংবাদ যখন আমি শুনি তখন আমি বাসায় ছিলাম। সেই দিন হটাৎ করে কেউ একজন ফোন দিয়ে বললো সালমান শাহ একটু আগে মারা গিয়েছে। তখন আমি সেই লোকটার কথা শুনে আমি তখন তাকে ধমক দিয়ে বললাম এই সব উল্টা পাল্টা কথা বলার মানে কি? তখন আমি এইটা কোনো ভাবেই বিশ্বাস করতে পারি নি। তারপর আমার ছোট বোন যখন বাহিরে থেকে আসে তখন সে বলে সালমান শাহ মারা গিয়েছে। বাহিরে নাকি সালমান শাহ মারা যাবার বিষয়ে সবাই কথা বার্তা বলছে, আমার বোন ওই খানে থেকেই শুনেছে। আর এই কথা শুনার পর আমি পুরোপুরি হতবাক হয়ে যাই। তার তাকে আমার দেখা হয় এফডিসিতে যখন তার মরদেহ আনা হয়েছিল ওই খানে। 

শাবনূর আবার ফিরে পেলে সালমান শাহকে যা জিজ্ঞাসা করতো

জানি এইটা কখনো সম্ভব না  তবুও যদি কখনো সালমান শাহের সাথে দেখা হয়ে যায় বা তাহলে আমি তাকে অবশ্যই জিজ্ঞাসা , কেন তুমি সবাইকে ছেড়ে চিরদিনের মতো চলে গেলে  ? তোমার  কি এত কষ্ট ছিল যার জন্য এমনটা করেছো ? কেনই বা আমাকে বললে না ? আমরা জানতে চাইতাম তুমি কিসের দুঃখে মারা গেলে ? পৃথিবীতে তোমার অনেক  ভালোবাসা ও আরো এত এত জিনিস ফেলে কেন  গেলে। আর আমার জানা মতে তোমার তো কোনো কিছুর অভাব ছিল বলে মনে হয় না। তাহলে কেন চলে গেলে ?সালমান শাহের কাছে থেকে এই সব প্রশ্নের উত্তর জানার আমার খুব ইচ্ছা। জানি এই জীবনে আর তার সাথে দেখা হবে না ,তবে কখনো যদি হয়ে ও যায় তার সাথে তাহলে অবশ্যই  আমি তাকে এই কথা গুলো জিজ্ঞাসা করবো। আমার এই প্রশ্ন গুলো সব সময় তারা করে বেড়ায়। আর জমে থাকে অজস্র কষ্ট। 


Comments

Popular posts from this blog

শাবনূরের লাইফস্টাইল অজানা অনেক তথ্য I আসল নাম | উচ্চতা I ওজন I শারীরিক পরিমাপ | বয়স | পড়ালেখা | স্বামী | ক্যারিয়ারের অর্জন | বাড়ি | জীবনী এবং উল্লেখযোগ্য সিনেমায় ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্ককে জানতে অবশ্যই পড়ুন

বাংলাদেশী ব্যান্ডের আন্ডাররেটেড গান সমূহের তালিকা দেয়া হলো । নতুন কিছু গানের স্বাদ পেতে অবশ্যই পড়ুন।

পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান ২০ টি বস্তু, যা এতটাই দামী আপনি শুনে অবাক না হয়ে পারবেন না,জানতে অবশ্যই পড়ুন।